ক্রিকেট

শিবির না হলে তোর ফেসবুকে এসব স্ট্যাটাস কেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন ঢাকা মহানগর হাকিম সারাফুজ্জামান আনছারীর আদালতে গতকাল শুক্রবার ফাহাদ হত্যাকা-ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দি দেওয়ার পর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। জিয়ন আদালতের কাছে ফাহাদ নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা তুলে ধরেন। জিয়ন জবানবন্দিতে বলেন, তিনি নিজেও নির্যাতনে সরাসরি অংশ নেন। মারধরের সময় ফাহাদ বারবার তার হাত ধরে। ফাহাদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালান অনিক সরকার, রবিন, সকাল ও মুজাহিদুর রহমান। ফাহাদের পায়ের নিচে স্টাম্প দিয়ে পেটাতে থাকে সকাল।

জিয়ন বলেন, ফাহাদকে শিবির সন্দেহে যখন ২০১১ নম্বর কক্ষে মারধর করা হচ্ছিল, তখন তিনি বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এক পর্যায়ে বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমাকে মারছ কেন।’ এরপর মারধরের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে নিজের প্রাণ বাঁচাতে ফাহাদ বুয়েটের শেরেবাংলা হলের কয়েকজন ছাত্রের নাম বলেন। জানান, ওরা শিবিরকর্মী হতে পারে। ওই নামগুলো নিয়ে তাৎক্ষণিক খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, তারা শিবিরকর্মী নয়। এ অবস্থায় ‘মিথ্যা’ বলার অপরাধে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

জিয়ন জানান, পেটানোর সময় ফাহাদ নিজেকে শিবিরকর্মী বলে অস্বীকার করছিল। হামলাকারীরা এ সময় বলতে থাকে, ‘শিবির না হলে তোর ফেসবুকে এ ধরনের স্টাটাস কেন’। নির্যাতনের সময় বেশ কয়েকবার ফ্লোরে শুয়ে পড়েন ফাহাদ। তাকে আবার
তুলে মারধর করা হয়। কেউ কেউ তখন বলছিলÑ ‘ও ভং ধরেছে। ওষুধ পড়লে ঠিক হয়ে যাবে।’ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কয়েকবার বমিও করে ফাহাদ।
৫ দিনের রিমান্ডের চার দিন শেষে গতকাল শুক্রবার জিয়নকে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। মহানগর হাকিম মো. সারাফুজ্জামান আনসারী তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার আদালতে জবানবন্দি দেন এই মামলার আরেক আসামি ইফতি মোশাররফ সকাল।

সূত্র জানায়, ফাহাদকে ধরে নেওয়ার পর তার মোবাইল ও ল্যাপটপ চেক করেন কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। ওই সময় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের জিয়ন ২০১১ নম্বর কক্ষে যান। এসময় ফাহাদের কাছে মেহেদি জানতে চান বুয়েটে কারা কারা শিবির করছে। তিনি দেখেন ফাহাদ ভয়ে এলোমেলো কথা বলে। এ সময় অন্য কেউ একজন ক্রিকেট খেলার স্টাম্প নিয়ে আসে। ওই স্টাম্প দিয়ে ফাহাদকে মারধর করে সকাল। এক পর্যায়ে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক অনিক সরকার বেধড়ক পেটাতে থাকে। হাঁটু, পা, পায়ের তালু ও বাহুতে স্টাম্প দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। এতে ভেঙে যায় স্টাম্প। পরে মশারি টানানোর লোহার রড দিয়ে মারা হয়। অনিক মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে নতুনভাবে মারতে শুরু করেন জিয়ন। ফাহাদকে চড় এবং স্টাম্প দিয়ে হাঁটুতে মারতে থাকে। পরে রশি দিয়ে মারতে থাকে মুজাহিদ। মারধরের পর ফাহাদ অচেতন হয়ে পড়লে হামলাকারীদের কেউ কেউ বলে, ‘ওকে গোসল করিয়ে মালিশ করিয়ে দেওয়া হোক।’ এ সময় আরবারের কক্ষ থেকে কাপড়-চোপড় আনা হয়।

Comment here

Facebook Share