শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে কঠোর বিএনপি - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে কঠোর বিএনপি

নজরুল ইসলাম : দলীয় শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। গত শনিবার খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দিয়ে সেই কড়া বার্তাই দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের সিনিয়র নেতারা। নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহ করলে যে কাউকেই এমন পরিণতি ভোগ করতে হবে। জ্যেষ্ঠ নেতাদের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হবে না।

সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে অব্যাহতি এবং দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ায় শফী আহমেদ চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে শোকজ করে বিএনপির হাইকমান্ড। তখনই বলা হয়েছিল, দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

মঞ্জুকে অব্যাহতি দেওয়ার পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহীন নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। কারণ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন শাহীন। তার বিরুদ্ধে দলের একটি অংশ দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে। জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমাদের সময়কে বলেন, হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যান। সেই থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তারেক রহমান। তিনি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে ‘কঠোর ও কৌশলে’ দল পরিচালনা করছেন। দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের যৌথ নেতৃত্বে দল পরিচালনা করা হয়।

নির্বাচনের পরের বছর ২০১৯ সালের জুনে দুই ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে পদোন্নতি দিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়। এ নিয়েও তুমুল সমালোচনা হয় দলের মধ্যে। কিন্তু কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। এ বছরই ছাত্রদলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহ দেখা দেয়। তখন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রুহুল কবির রিজভীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে ১২ ছাত্রদল নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। সেই বহিষ্কারাদেশ এখনো প্রত্যাহার হয়নি।

দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সরকারবিরোধী একটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের অভিযোগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দুই ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে শোকজ করা হয়। সন্তোষজনক উত্তর দেওয়ায় পরে তাদের দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় করা হয়। গত এপ্রিলে এক আলোচনাসভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বক্তব্য বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। তাকেও শোকজ করা হয়। শোকজের জবাব দিয়ে তিনি রক্ষা পান। দলের একটি অংশ তাকে বহিষ্কারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

দলের বড় একটি অংশ মনে করে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে নেতাকর্মীরা যখন সোচ্চার, ঠিক তখনই নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া ঠিক হয়নি। দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা আমাদের সময়কে বলেন, যে সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন গড়তে ঐক্যের আওয়াজ তুলতে হবে, ঠিক তখন মঞ্জুকে অব্যাহতি দিয়ে দলের মধ্যে একটি বিভক্তি তৈরি করা হলো। এটি দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করে না।

ওই দুই নেতা আরও বলেন, এই লক্ষণ ভালো কোনো ফল বয়ে আনবে না। এখন গঠনমূলক চিন্তার সময়। কেউ ভুলত্রুটি করলেও এটি কঠোর হওয়ার সময় নয়। তাদের মতে, মঞ্জুকে আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রাখা যেত। তবে দলের একটি অংশ মনে করে, মঞ্জু ৩৩ বছরের বেশি সময় ধরে খুলনার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর কত? এর পরও মহানগর সভাপতির পদ থেকে বাদ পড়ার পর তার কোনো বক্তব্য থাকলে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন।

 

Comment here