নিজস্ব প্রতিবেদক : শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার শাহ আলম জমাদ্দার (৮৭) হৃদরোগ ও কিডনির সমস্যায় গত এপ্রিলে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে যান। সেখানে ২৩ এপ্রিল তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর বাড়ি ফিরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা প্রশাসন থেকে শাহ আলম জমাদ্দারকে করোনামুক্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার জমাদ্দারকান্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহামুদুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সকালে প্রশাসনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা শাহ আলম জমাদ্দারের বাড়ি গিয়ে তাকে করোনামুক্ত হওয়ার খবর দেই। তখন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা অনেক আনন্দিত হয়েছিলেন। বিকেলে হঠাৎ তার অসুস্থ হওয়ার খবর শুনে মনটা খারাপ হয়ে যায়। চিকিৎসক নিয়ে তার বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফোনে জানতে পারি, তিনি মারা গেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তার পরপর দুবার করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদন নেগেটিভ আসায় মৃত্যুর পর শাহ আলমের আর পরীক্ষা করা হয়নি। তাকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, শাহ আলম বার্ধক্যজনিতসহ হৃদরোগ ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। এ কারণে প্রায়ই তাকে হাসপাতালে নিতে হতো। অসুস্থতা বেশি হওয়ায় এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। ২১ এপ্রিল ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে শাহ আলমের করোনারও পরীক্ষা করা হয়। ২৩ এপ্রিল তার প্রতিবেদন ‘পজিটিভ’ আসে।
বাড়ি ফিরে তার সংস্পর্শে আসা আটজনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে তার স্ত্রী ফতেজা বিবির (৭৫) করোনা শনাক্ত হয়। তাদের বাড়িতে আলাদা (আইসোলেশন) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। তারা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। পরপর দুই দফায় তাদের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল ‘নেগেটিভ’ আসে।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহামুদুল হাসান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেনু দাস, জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকারসহ কর্মকর্তারা বাড়িতে গিয়ে তাদের করোনামুক্ত ঘোষণা করে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। ফলমূলসহ উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়। এরপর বিকেলে শাহ আলম অসুস্থ হয়ে পড়েন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি মারা যান।
শাহ আলমের ছেলে বাদল জমাদ্দার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার যখন ইউএনও, ওসি, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এসে মা–বাবার করোনা মুক্তির খবর দেন, সবাই খুশি হয়েছিলাম। তারা যখন ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান, বাবা খুশি হয়ে বলেছিলেন, এখন মরেও শান্তি পাব যে করোনা জয় করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ হয়তো বাবার কথাই রেখেছেন, করোনা জয়ের পরই তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। করোনা নিয়ে মারা গেলে সারা জীবন আমাদের আক্ষেপ থাকত। রাত ১১টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে বাবাকে দাফন করা হয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা সদর থেকে শাহ আলমের বাড়ি অন্তত ১৫ কিলোমিটার দূরে। ওই গ্রামে গিয়ে শাহ আলম ও তার স্ত্রী ফতেজাকে করোনামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। তারা যেহেতু বয়স্ক ছিলেন, তাদের নিয়ে আমাদেরও দুশ্চিন্তা ছিল। যখন তাদের বাড়ি গিয়ে করোনামুক্ত হওয়ার খবর দিই, সবাই অনেক আনন্দিত হন।’
তিনি আরও বলেন, ‘৮-৯ ঘণ্টার ব্যবধানে সেই আনন্দ বেদনায় রূপ নিল। তিনি করোনা জয় করলেও মৃত্যুকে জয় করতে পারলেন না। করোনা জয়ের আনন্দ নিয়েও মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন।’
Comment here