নিজস্ব প্রতিবেদক : বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি সুপ্রিম কোর্ট বারে তার আইনজীবী জেড আই খান পান্নার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এর আগে আজ রোববার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে সিনিয়র ওই আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে তার চেম্বারে যান তিনি।
সাক্ষাতে আইনজীবী জেড আই খান পান্নার পা ছুঁয়ে সালাম করেন মিন্নি। এ সময় তার সঙ্গে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরও উপস্থিত ছিলেন। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না।
সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, ‘ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শের বিষয় আছে। আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শের বিষয় আছে। চার্জশিটের কথা তো আগাগোড়াই বলেছি, এটা একটা মনগড়া উপন্যাস। মূলত মূল আসামিদের এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য এ ধরনের কারবার করা হয়েছে। নাথিং নিউ। জজ মিয়া এবং জাহালমের আরেকটা সংস্করণ।
আদালতে মিন্নির দেওয়া জবানবন্দি প্রকাশের বিষয়ে জেড আই খান পান্না বলেন, দেখেছি। আমি তো কোর্টে বসেই দেখেছি। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত যখন আমাদের দেখাতে দিতে বলেছিল তখন এক নজর দেখেছি। সেটাও (১৬৪ ধারার জবানবন্দি) একটা উপন্যাস। সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি কোর্টকে বলেছেন-এত সুন্দর করে লেখা যা চিন্তার বাইরে। সুস্থ মাথায় এত সুন্দরভাবে লেখতে পারে না।’
এটা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, আগেই করা হয়েছে। মিন্নি নিজে জেলখানা থেকে করেছে।
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা তো পুলিশের কাছে ছিল। সেখানটা বাদে তো আর আসতে পারে না। ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি এটা গণমাধ্যমে এসেছে। কোর্টের কাছে দেওয়ার পূর্বে এটা প্রকাশিত হয়েছে।’
এটা ঠিক হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, ‘এটা ঠিক হয়নি। এটা আদালত অবমাননা।’
এর আগে গতকাল শনিবার বিকেল ৪টায় মিন্নি ও তার বাবা বরগুনার লঞ্চঘাট থেকে এমভি শাহরুখ লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। এদিন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘আমার মেয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি।’ এ সময় মামলার বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন বলেও জানান তিনি।
গত ১৬ জুলাই সকাল পৌনে ১০টার দিকে মিন্নিকে তার বাবার বাড়ি বরগুনা পৌর শহরের নয়াকাটা-মাইঠা এলাকা থেকে পুলিশ লাইনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়। এর পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একই দিন রাত ৯টায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গত ১ সেপ্টেম্বর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। একই সঙ্গে ১ নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মামলাটিতে এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে ছয় কিশোর অপরাধী শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে। এ ছাড়া মিন্নিসহ জামিনে রয়েছেন দুজন।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। গুরুতর আহত তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
Comment here