সাত বছরে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে ১২ গুণ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

সাত বছরে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে ১২ গুণ

হাবিব রহমান : দিন দিন বেড়েই চলেছে শিশুর প্রতি নির্মমতার মাত্রা। শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা জাতীয় নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএসএএফ) পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে সহিংসতা ও নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র। সংগঠনটির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাত বছরে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে ১২ গুণ। একইভাবে হত্যা বেড়েছে আড়াই গুণ, অপহরণ তিনগুণ, আত্মহত্যা তিনগুণ। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক নির্যাতন, পারিবারিক সহিংসতা, নিখোঁজসহ নানাভাবে নিগ্রহের শিকার হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা।

এ বিষয়ে বিএসএএফের পরিচালক আবদুস শহিদ মাহমুদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘ধর্ষণের পরিসংখ্যান অনেক বেশি ঊর্ধ্বমুখী। প্রথমত সামাজিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় অথবা মূল্যবোধ আর অবশিষ্ট নেই। লকডাউনের মধ্যেও ধর্ষণ বেড়েছে। কারণ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ভিকটিমদের প্রতিবেশী। লকডাউনকালে তাদের চলাফেরা কমে যায়। তখন সুযোগটা বেশি ছিল। স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুদেরও পাওয়া গেছে হাতের কাছেই!’ তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদ- হয়েছে। কিন্তু সাজা কার্যকরের দৃষ্টান্ত সামনে নেই। তাই আইন আইনের জায়গাতেই আছে। এসব নানা কারণে বেড়ে চলেছে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ।’

বিএসএএফের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১২ সালে ধর্ষণের শিকার হয় ৮৫ শিশু। এর সাত বছর পর ২০১৯ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৫টিতে। ২০১২ সালে হত্যাকা-ের শিকার হয় ২০১ শিশু। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় দ্বিগুণেরও বেশি, অর্থাৎ ৪৪৮ জনে। ২০১২ সালে অপহরণের শিকার হয় ৬৭ শিশু, ২০১৯ সালে ১৮৭ জন। এ ছাড়া ২০১৯ সালে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় ১০৮ শিশু, প্রতিবন্ধী ৪৪ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়, ধর্ষণের চেষ্টা হয় ১২৮ শিশুর সঙ্গে; যৌন সহিংসতার সময় মারধরের শিকার হয় ২৮ শিশু; যৌন হয়রানির শিকার হয় ২০৩ শিশু; ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৪৭ শিশু; ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করে ১৮ শিশু; পর্নোগ্রাফির শিকার হয় ১৯ শিশু, অপহরণের পর উদ্ধার করা হয় ১৬ শিশুকে; এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয় ৬ শিশু; সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয় একটি শিশু; বাল্যবিবাহের শিকার হয় ১৮ শিশু।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়নে গত ১৪ মার্চ ধর্ষণের শিকার হয় ১২ বছর বয়সী এক শিশু। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একরামুল হোসেন (২০) নামে এক ইটভাটা শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধর্ষণের পর শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, ধর্ষণের ফলে শিশুটির গোপনাঙ্গে মারাত্মক ক্ষত হয়। ক্ষতস্থানে সেলাই দেওয়া হয়।

শিশুটির ভাই জানান, তার মা অসুস্থ। রাতে তাকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়েছিলেন। তার স্ত্রীও মায়ের পাশে ছিলেন। রাত ১০টার দিকে প্রতিবেশী একরামুল হোসেন তার বোনকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর তাদের নির্মিতব্য বাড়ির ছাদে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় শিশুটির চিৎকারে ভাবিসহ প্রতিবেশীরা দৌড়ে এলে একরামুল হোসেন পালিয়ে যায়। শিশুটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

গত বছরের ১৫ অক্টোবর রাজধানীর পল্লবীতে ধর্ষণের শিকার হয় পাঁচ বছরের এক অবুঝ শিশু। এ ঘটনায় পিয়ারুল (৩০) নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশ। ধর্ষণের শিকার ওই শিশুটির বাবা বলছিলেনÑ আমি রিকশা চালাই। আর আমার স্ত্রী বাসাবাড়িতে কাজ করে। আমাদের সাত বছরের এক ছেলে ও পাঁচ বছরের এক মেয়ে রয়েছে। তাদের দুজনকে বাসায় রেখেই স্বামী-স্ত্রী দুজন কাজে বের হই। আমাদের পাশেই আরেকটি পরিবার ভাড়া থাকে। সেখানে পিয়ারুল নামে তাদের এক আত্মীয়ও থাকে। দুপুরে আমার ছেলে বাসায় ছিল না। বোনকে একা রেখে সে মাঠে গিয়েছিল। আর এ সুযোগে দুপুরের কোনো এক সময় পিয়ারুল আমার শিশু মেয়েকে ধর্ষণ করে।

শিশুর ওপর নির্মমতা প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, ‘শিশু নির্যাতন দিন দিন বাড়ছে এটি ঠিক। আবার সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এটি বন্ধে সক্রিয়। তবে সমস্যা হচ্ছে সমাজের মধ্য থেকেই কারণগুলো তৈরি হয় এবং অসহিষ্ণু মানবগোষ্ঠী রয়েছে যাদের আচরণগত সমস্যা রয়েছে। এখানে মনে রাখতে হবে, নির্যাতনের সময় শিশুরা কিন্তু অন্য যে কারোর চেয়ে প্রতিরোধের দিক থেকে পুরোপুরি পিছিয়ে থাকে। তাদের ওপর নির্যাতন খুবই অমানবিক। এটি দমনে বিচারহীনতার সংস্কৃতি পরিহার এবং শিশুর নিরাপত্তায় সামাজিক বলয় গড়ে তুলতে হবে।’

 

Comment here