নিজস্ব প্রতিবেদক : সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। আগামীকাল শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আসছে আওয়ামী লীগের এ সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে। সংগঠনের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির যে নেতারা অতীতে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পেরেছেন তাদের মধ্য থেকে দুজন আগামী তিন বছরের জন্য দায়িত্ব পাবেন শীর্ষ দুই পদে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন মুখ আসছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্মেলনের আগেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার এবং সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে সংগঠন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে তিনি একটি বড় ঈঙ্গিত দিয়েছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তিনি চান, পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে এমন ব্যক্তিরাই আগামী দিনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্ব দেবেন। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য দুটি বিষয় মাথায় রেখে হিসাব করা হচ্ছে। এক পক্ষ মনে করেন, অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন প্রবীণ একজনকে সভাপতি ও অপেক্ষাকৃত তরুণ একজনকে সাধারণ সম্পাদক করলে সংগঠন ভালো চলবে। অপর পক্ষের মতে, সংগঠনে অবদান রয়েছে এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা; তাদের মধ্য থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে সংগঠন বেগবান হবে। ইতোমধ্যে এমন নেতাদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে রয়েছে। সম্মেলনের আগ মুহূর্তে তিনি চূড়ান্ত বার্তা দেবেন।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুই পদে সর্বোচ্চ আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি ও সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ, সহসভাপতি মতিউর রহমান মতি, সহসভাপতি আফজালুর রহমান বাবু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদস্য সচিব মেসবাহ উদ্দিন সাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল এবং আবদুল আলীম বেপারি। এ ছাড়া বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু এবং সাজ্জাদ সাকিব বাদশার নামও রয়েছে আলোচনায়। তবে অপেক্ষাকৃত কম বয়সের কারণে শেষ মুহূর্তে শীর্ষ দুই পদের দৌড় থেকে বাদ পড়তে পারেন ১/১১-এর সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে নেতৃত্ব দেওয়া টিপু ও বাদশা। মেসবাহ উদ্দীন সাচ্চু বাদ পড়তে পারেন পুরনো একটি হত্যা মামলার কারণে। ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এক বছর জেলে ছিলেন তৎকালীন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সারাদেশে সাংগঠনিক কাজে এ পদের অন্যদের চেয়ে বেশি সময় দিয়েছেন তিনি। সিনিয়র ও জুনিয়রের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হলে সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড়ে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন খায়রুল হাসান জুয়েল।
এর আগে গত ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন। সম্মেলন হলেও কমিটি ঘোষিত হয়নি এখনো। সংগঠনটির দায়িত্বশীলরা বলছেন, কেন্দ্রের সঙ্গে একই সঙ্গে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের শীর্ষ দুই পদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ উত্তরের সাবেক সভাপতি আনিসুজ্জামান রানা এবং ঢাকা মহানগর উত্তরে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসহাক মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফরোজ হাবীবের নাম আলোচনায় রয়েছে।
সম্মেলনের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের জন্য আমরা প্রস্তুত। ইতোমধ্যে সম্মেলন মঞ্চ এবং প্যান্ডেলসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সংগঠনটির এবারের সম্মেলনে ১ হাজার ৯৭৫ জন কাউন্সিলর এবং প্রায় ১৮ হাজার ডেলিগেট উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া অতিথি থাকবেন প্রায় ১৫ হাজার।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আমাদের সময়কে বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগকে ধারণ করেন এবং পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্য থেকেই সংগঠনের শীর্ষ নেতা নির্বাচিত হবে বলে আমি আশা করি।
Comment here