সুশাসন প্রতিষ্ঠাই চ্যালেঞ্জ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

সুশাসন প্রতিষ্ঠাই চ্যালেঞ্জ

মুহম্মদ আকবর : তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের তিন বছর পূর্ণ হলো আজ। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী গত তিন বছরে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় সরকার অনেক কাজই করেছে। সে বিবেচনায় ইশতেহারের অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। বাকি দুই বছরে ইশতেহারের পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। অন্যদিকে বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও বেকার সমস্যার সমাধান, দুর্নীতি দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তেমন অগ্রগতি নেই। উন্নয়ন ও সুশাসনের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে সেই উন্নয়ন ভালো ফল বয়ে আনবে না। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়- সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সর্বসাধারণের সহায়তা না থাকলে শতভাগ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

একাদশ নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ছিল- দেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি, নারীর ক্ষমতায়ন, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল, আইনের শাসন সুদৃঢ় করা, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, আধুনিক কৃষিব্যবস্থা- সর্বোপরি গ্রামে শহরের সুবিধা দেওয়া। এ ছাড়া দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ব্লু-ইকোনমির উন্নয়ন, নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ, ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার মতো অঙ্গীকারও সেই ইশতেহারে ছিল।

এসব অঙ্গীকারের কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান আমাদের সময়কে বলেন, ‘দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে, হচ্ছে- এটি সত্যি। তবে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ঘাটতি রয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘সরকারের প্রচেষ্টা ছিল। তবে করোনা মহামারীর কারণে কাজের যে গতি ছিল, তা অনেকটা কমে গেছে। তবে আশার কথা হলো- করোনা সংকট যখন একেবারের চূড়ায়, তখনো সরকারের কার্যক্রম বন্ধ ছিল না।’

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কাজ হলো- পদ্মা সেতু, যা নির্মাণের অর্থ থেকে শুরু করে সব কিছুতেই তর্কবিতর্ক হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবেই সে তর্কবিতর্ক অব্যাহত ছিল। এমন অবস্থায় শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের অঙ্গীকার করেছিলেন। সেই অঙ্গীকারের বিষয়টি মাথায় রেখে স্বপ্নপূরণের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ যে ইশতেহার দিয়েছিল, তা ধরেই তারা অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। আরও দুই বছর বাকি আছে; আমরা আশা করব ইশতেহারের বাকি কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।’

আরেফিন সিদ্দিক আরও বলেন, ‘তবে একটি বিষয়ে মনে রাখা দরকার- উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার উদারভাবে বরাদ্দ দিচ্ছে। এই সুযোগে সরকারের আমলা, রাজনীতিক, প্রভাবশালী মহল বিপুল পরিমাণ অর্থ সরিয়ে নিচ্ছে, বিদেশে পাচার করছে। এ বিষয়টি সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার পরিস্থিতি অনেকটাই মøান করে দিচ্ছে।’

ইশতেহার বাস্তবায়নের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ আমাদের সময়কে বলেন, ‘এই সরকারের ক্ষমতাগ্রহণের পর একটি বড় সময়জুড়ে চলছে করোনা মহামারী। এই মহামারীতে সারাবিশ্বের অনেক প্রভাবশালী দেশ বিপর্যস্ত। পৃথিবী এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় আসেনি। এখনো অনেক দেশে লকডাউন হচ্ছে। হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে। অনেক দেশ এখনো আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের মতো ঘনবসতি দেশে করোনা আক্রান্ত এবং প্রাণহানি মোকাবিলার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সফল।’

বেকার সমস্যা দূরীকরণে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে হানিফ বলেন, ‘আমাদের সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছে, যেখানে অন্তত এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। হাইটেক পার্ক করে দেওয়া হয়েছে জেলায় জেলায়। এতে লার্নিং ও আর্নিংয়ের মাধ্যমে অনেকে আয় করার সুযোগ পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেকে সচ্ছল অবস্থায় চলে এসেছেন। এটিকে পুঁজি করে; কিন্তু লাখ লাখ ছেলেমেয়ে সচ্ছলতায় ফিরে আসতে পারেন। অর্থাৎ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো এত ঘনবসতির দেশে শতভাগ বেকার সমস্যা দূরীকরণ একটি কঠিন ব্যাপার।’

সরকার সুশাসনের পথে কতটুকু এগিয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘সুশাসন একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে সব রাজনৈতিক দল ও মানুষের সহায়তা লাগে। সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হয়। আমাদের দেশে অনেক রাজনৈতিক দল আছে, যারা সারাদিন গণতন্ত্রের কথা বলেন। তারা গণতন্ত্র বলতে রাজপথে নেমে গাড়ি-ভাঙচুর করাকে বোঝে। এটি তো গণতান্ত্রিক অধিকার হতে পারে না। রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র ও সুশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে প্রকৃত অর্থে সুশাসন বলতে যা বোঝায়, তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। সর্বোপরি বর্তমান সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। আইনের শাসনের বাস্তবসম্মত ইন্ডিকেশন হলো- আইনের কঠোর প্রয়োগ। তা কিন্তু হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।’

 

Comment here