বরিশাল প্রতিনিধি : বরিশালের হিজলা উপজেলায় জেলে জব্বার সরদারকে হত্যার হুমকি দিয়ে তার স্ত্রীকে গত চার বছর ধরে নিয়মিত ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে জামাল সরদারের বিরুদ্ধে। ধর্ষণের ফলে গৃহবধূ একটি সন্তানের জন্ম দেন, যার বয়স প্রায় তিন বছর বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী নারী এবং তার স্বামীর। এদিকে চার বছর ধরে নিয়মিত ধর্ষণকে অবৈধ পরকীয়া দাবি করে স্ত্রীকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন স্বামী জব্বার সরদার।
আজ বৃহস্পতিবার ওই স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য ঝন্টু হাওলাদার। তিনি জানান, অভিযুক্ত জামাল সরদার একই বাড়ির মো. রত্তন সরদারের ছেলে।
নির্যাতিত গৃহবধূ জানান, তার বাড়ি হিজলা উপজেলার হিজলাগৌরব্দী ইউনিয়নের দক্ষিণ চর দেবুয়া এলাকায়। গত সাড়ে ৪ বছর আগে তার সঙ্গে বাউসিয়া এলাকার খালেক সরদারের ছেলে জব্বার সরদারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর কিছুদিন ভালোভাবেই সংসার চলছিল। এরই মধ্যে বাড়ির জামাল সরদারের কু-দৃষ্টি পড়ে তার ওপর। একপর্যায়ে কু-প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
ওই গৃহবধূ বলেন, ‘জব্বার জীবিকার তাগিদে দীর্ঘদিনের জন্য একবার বড় নদীতে (বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি) মাছ ধরতে গেলে জামাল একদিন ঘরে ঢুকে তাকে জাপটে ধরে। এ সময় চিৎকার করার চেষ্টা করলে তার স্বামীকে হত্যার হুমকি দেয় জামাল। ভয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে তাকে ধর্ষণ করেন জামাল।’
গৃহবধূ আরও বলেন, ‘আমার স্বামীকে হত্যা করবে-এমন হুমকি দিয়ে আমাকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে জামাল। সেই ভিডিও সকলের মোবাইলে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমার সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা করত।’
ভুক্তভোগী জানান, এর মধ্যে তার গর্ভে জামাল সরদারের সন্তান আসে। সেই সন্তানের বয়স এখন প্রায় তিন বছর। এদিকে স্ত্রীর সঙ্গে জামালের অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি মোবাইল রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে জানতে পারেন জব্বার সরদার। পরে তিনি স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন।
ওই গৃহবধূ বলেন, ‘যখন আমার গর্ভে সন্তান আসে তখন আমাকে বিয়ে করবে বলে কথা দেয় জামাল। এখন আমার বাচ্চার বয়স প্রায় তিন বছর হয়ে গেছে। আমার স্বামী বিষয়টি জানতে পেরে আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই পলাতক রয়েছে জামাল সরদার।’
স্বামী জব্বার সরদার বলেন, ‘আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে চার বছর ধরে ধর্ষণ করা হলেও এতদিন আমার স্ত্রী কিছুই বলেনি। মোবাইল রেকডিং ও এলাকার লোকজনের মাধ্যমে জানতে পেরে চরিত্রহীন স্ত্রীকে তাড়িয়ে দিয়েছি।’
অভিযুক্ত জামাল সরদারের বাবা রত্তন সরদার বলেন, ‘এই ঘটনা আমি জানতে পেরে ছেলেকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি।’
হিজলা উপজেলার বাউসিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য ঝন্টু হাওলাদার বলেন, ‘ওই গৃহবধূর স্বামীর মাধ্যমে ঘটনা জানতে পেরেছি। বর্তমানে ধর্ষণের শিকার গৃবধূকে তার স্বামী এবং ধর্ষক জামালকে তার বাবা ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।’
হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অসীম কুমার সিকদার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে এই বিষয়ে জানায়নি। লিখিত অভিযোগ দিলে দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনাগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
Comment here