সারাদেশ

হত্যার কারণ ‘পরকীয়ার প্রতিশোধ’ ৩ বছর পর বেরিয়ে এলো

জনি রায়হান : পাবনার সাথিয়ার বাসিন্দা ঠান্ডু মোল্লা দীর্ঘ দিন যাবত ওমান প্রবাসী। ২০১৩ সালে দেশে ফিরে বিয়ে করে স্ত্রীকে রেখে আবারও ওমান ফিরে যান তিনি। ঠান্ডু মোল্লা ওমানে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী ছালমা খাতুন বাবার বাড়ির প্রতিবেশী শহিদুল ইসলামের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক জড়িয়ে পড়েন।

২০১৬ সালে ছুটিতে দেশে ফিরলে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে ঠান্ডু মোল্লা তার স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর স্ত্রীর প্রেমিক শহিদুল ইসলামকে হত্যা করে ঘটনার প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি।

ওই ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠান্ডু মোল্লা তার স্ত্রী ছালমাকে দিয়েই সেই প্রেমিক শহিদুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে ময়মনসিংহ থেকে পাবনায় ডেকে আনেন। পরে ধারালো ছুরি দিয়ে শহিদুলের বুকে ও পেটে একের পর এক ছুরিকাঘাত করে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। ঘটনার পরে শহীদুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য এত দিন পর্যন্ত কেউই জানতো না। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি কিছু দিন তদন্ত করেছে সাঁথিয়া থানা পুলিশ। তাদের তদন্তের পর মামলাটির তদন্তভার পায় পাবনা জেলা সিআইডি। কিন্তু সিআইডি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হয়।

তারা মামলার তিন আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে এবং অপর দুই আসামিকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। সেখানে হত্যার কারণ হিসেবে আর্থিক লেনদেন নিয়ে পূর্ব শত্রুতার কথা উল্লেখ করা হয়। তবে বাদীর নারাজী আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলাটির পুনঃতদন্ত দেয় পাবনা জেলার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।

পিবিআইতে তদন্তে নেমে তিন বছর পরে এক আসামি গ্রেপ্তারসহ হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করেছে। মামলা সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে এসব কথা জানিয়েছেন।

এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হায়াত আলী নামে একজনকে গত ১৮ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। গ্রেপ্তারের পরে ওই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। এই হায়াত আলী হত্যাকাণ্ডের সময় নিহত শহিদুলকে জাপ্টে ধরেছিল এবং ঠান্ডু মোল্লা ধারালো ছুরি দিয়ে তাকে একের পর এক ছুরিকাঘাত করেছিল।

পিবিআইয়ের পাবনা জেলা প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন কান্তি চৌধুরী দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনে বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে ঠান্ডু মোল্লার সঙ্গে নিহত শহিদুল ইসলামের বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ৪ লাখ টাকা টাকা ফেরত না দেওয়ার জন্য হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি উল্লেখ করেছিল। কিন্তু পিবিআইর তদন্তে নিহত শহিদুল ইসলামকে হত্যার মূল কারণ হিসেবে মামলার পলাতক আসামি ঠান্ডু মোল্লার স্ত্রী ছালমা খাতুনের সঙ্গে নিহত শহিদুল ইসলামের পরকীয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। যা মামলার গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. হায়াত আলীর আদালতে প্রদান করা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও উল্লেখ করেছেন।’

গ্রেপ্তার আসামির বরাত দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শহিদুল ইসলামকে হত্যা করার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আসামি হায়াত আলী ও মো. ঠান্ডু মোল্লা ধারালো ছুরিসহ ওই এলাকার করমজা বাজারে এক মাংসের দোকানের পাশে ওঁৎ পেতে ছিলেন। মোবাইল ফোনে ছালমা খাতুন নিহত শহিদুলকে ওই বাজারের মাংসের দোকানের সামনে ডাকেন। তখন ছালমা খাতুন ও শহিদুল ইসলাম দুজনই দেখা করে একে অপরের হাত ধরে একসঙ্গে হাঁটতে থাকেন। খানিক পর অন্ধকার নেমে আসলে সন্ধ্যা অনুমানিক ৭টার দিকে তারা আবারও ওই মাংসের দোকানের সামনে পৌঁছালে আকস্মিকভাবে হায়াত আলী লাফ দিয়ে শহিদুলকে জাপ্টে ধরে এবং ঠান্ডু মোল্লা ধারালো ছুরি বের করে শহিদুল ইসলামের বুকে ও পেটে একের পর এক ছুরিকাঘাত করতে থাকে। তখন শহিদুল চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।’

‘তার চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে আসামি হায়াত আলী, মো. ঠান্ডু মোল্লা ও ছালমা খাতুন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত আহত অবস্থায় শহিদুলকে স্থানীয় লোকজন প্রথমে বেড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে তার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শহিদুল ইসলাম গত ১৭ অক্টোবর রাতে মারা যান।’

এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই মো. সবুজ আলী জানান, গ্রেপ্তারকৃত মূল আসামি ঘটনার পর থেকেই নানা কৌশলে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পলাতক ছিলেন। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । আর আরেক আসামি ঠান্ডু মোল্লা ঘটনার পরই বিদেশে পালিয়েছেন। বর্তমানে তিনি ওমানে অবস্থান করছেন।

Comment here

Facebook Share