হাত দিয়ে প্রতিবন্ধক সরিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

হাত দিয়ে প্রতিবন্ধক সরিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার

ট্রেন আসার মিনিট কয়েক আগে রেল ক্রসিংয়ে নিয়ম মেনেই নামানো হচ্ছে প্রতিবন্ধক (বার)। কিন্তু নিরাপত্তার সেই প্রতিবন্ধকে তোয়াক্কা নেই অনেকের। ক্রসিংয়ে ফেলা প্রতিবন্ধক হাত দিয়ে ওপরের দিকে উঠিয়ে দিয়ে তার নিচ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন সবাই। ট্রেন আসার আগমুহূর্ত পর্যন্ত চলতে থাকে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার।

গত বৃহস্পতিবার বিমানবন্দর রেলস্টেশনের আগে আশকোনা রেল ক্রসিংয়ে প্রতিবন্ধক সরিয়ে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারের দৃশ্য চোখে পড়ে। এ সময় লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্ব পালনকারী গেটম্যানদের নির্দেশনাও মানছিলেন না পথচারীরা। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ক্রসিংয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা রিকশাচালকদেরও প্রতিবন্ধক উঠিয়ে পার হতে দেখা গেছে।

প্রতিবন্ধক এক হাতে ঠেলে তুলে আশকোনার দিক থেকে বিমানবন্দরের দিকে আসছিলেন আরাফাত সরকার। ঝুঁকি নিয়ে এভাবে পারাপারের সময় অন্য হাতে মুঠোফোন নিয়ে তিনি কথাও বলছিলেন।
প্রতিবন্ধক ফেলার পরও কেন পার হচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তা পার হতে লাগে ১০ সেকেন্ড। অথচ ট্রেন আসতে এখনো ৩-৪ মিনিট দেরি।  তাই একটু তাড়া থাকায় এভাবে পার হয়েছেন বলে তিনি জানান।

ডান পায়ে আঘাত পেয়ে এক পাশে ক্রাচের সাহায্যে হাঁটছিলেন এক বয়স্ক লোক। এমন অবস্থাতেও প্রতিবন্ধকের নিচ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার কেন করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পায়ে ব্যথা, দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছিল। ট্রেনও আসতে দেরি। তাই পার হয়ে গেছি।’

এ ছাড়া আশকোনা ক্রসিংয়ে এক ঘণ্টায় পাঁচটি ট্রেন যায়। প্রতিবার লোহার প্রতিবন্ধক ফেলার পরও এর নিচ দিয়ে প্রচুর লোকজনকে পার হতে দেখা যায়। দেখা গেছে, বাচ্চাকে কোলে নিয়ে মা পার হচ্ছেন, প্রতিবন্ধক উঁচিয়ে ধরেছেন বাবা, আবার যাত্রী রিকশা থেকে নেমে প্রতিবন্ধক উঁচিয়ে ধরছেন, চালক রিকশা নিয়ে  পার হচ্ছেন। আবার অনেককে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে প্রতিবন্ধকের নিচ দিয়ে রাস্তা পার হতে দেখা গেছে।
আশকোনা রেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান রায়হান মিয়া জানান, সাধারণত ট্রেন আসার চার মিনিট আগে প্রতিবন্ধক নামানো হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ ট্রেন আসার আগপর্যন্ত প্রতিবন্ধকের নিচ দিয়ে ক্রসিং পার হয়। এ ছাড়া ক্রসিংয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা রিকশার জন্য সঠিক সময়ে প্রতিবন্ধক নামাতে সমস্যা হয় বলে তিনি জানান।

প্রতিবন্ধকের নিচ দিয়ে শুধু মানুষ নয়, রিকশা চালকেরাও প্রতিবন্ধক উচিয়ে রিকশা নিয়ে চলে যান। মাঝে মধ্যে প্রতিবন্ধকের ঠিক নিচেই রিকশা রেখে দেওয়ার কারণে প্রতিবন্ধক সঠিক সময়ে নামাতেও বেগ পেতে হয় গেইটম্যানদের। এ ছাড়া ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের ম্যানেজ করে রেল লাইন পর্যন্ত এসে যাত্রীর অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকেন অনেক রিকশা চালক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক গেইটম্যান বলেন, রিকশা নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক বিভাগের আনসার সদস্যরা ক্রসিং এলাকায় আছে। কিন্তু তাদের কাছে কোন ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যায় না। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজও আমাদেরকেই করতে হয়। আনসার সদস্যরা রিকশা থেকে ৫-১০ টাকা নিতেই ব্যস্ত থাকে বলেও অভিযোগ এই গেইটম্যানের।

আশকোনায় দায়িত্ব পালনরত এক আনসার সদস্যকে ব্যাটারি চালিত রিকশা চালকদেরক কাছ থেকে এ ভাবে টাকা নিতেও দেখা গেছে। কাছে গিয়ে দেখা যায় ওই আনসার সদস্যের ইউনিফর্মে নাম ফলক নেই। নাম জানতে চাইলে তিনি কারন জানতে চান। তখন রিকশা চালকদের কাছে কিসের টাকা নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই আনসার সদস্য বলেন, চালকের কাছে ভাংতি ছিল না, তাই টাকা দিয়েছিলাম। ওই টাকা সে ফেরত দিয়েছে।

এ বিষয়ে বিমানবন্দর ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার এসি এস এম আশিকুর রহমান বলেন, আমি দুই দিন হয় এই এলাকার দায়িত্বে এসেছি। আশকোনা রেল ক্রসিংয়ের বিষয়টি
খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

Comment here