বিএসএমএমইউ হাসপাতালে কেবিন ব্লকে থাকা কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দন্ত বিভাগে নিয়ে গতকাল শনিবার দাঁতের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। দুপুর দেড়টার দিকে কড়া পাহারায় তাকে কেবিন ব্লক থেকে বের করা হয়। এর পর একটি মাইক্রোবাসে করে নেওয়া হয় শখানেক গজ দূরের আরেকটি ব্লকে দন্ত বিভাগে। বেলা সোয়া ২টার দিকে কেবিন ব্লকে ফিরিয়ে নেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। হুইলচেয়ারে বসা খালেদা জিয়ার পরনে ছিল গোলাপি রঙের শাড়ি, চোখে চশমা। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার পর বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে মাহবুবুল হক সাংবাদিকদের সামনে আসেন। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপরের মাড়ির দুটি দাঁতে ইরিটেশন হচ্ছিল, সে জন্য তিনি আনইজি ফিল করছিলেন। এতে তার জিবে ছোট আকারে ঘা হয়েছে। সেটি ট্রিটমেন্ট দেওয়ার জন্য আজ তাকে ডেন্টাল বিভাগে নেওয়া হয়। আধা ঘণ্টাব্যাপী চিকিৎসা শেষে দাঁতের সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।
বিএসএমএমইউর ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিফেসিয়াল বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম বিএনপি চেয়ারপারসনের দাঁতের চিকিৎসা দেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি আজ পরীক্ষা করে দেখলাম, তার কয়েকটা ভাঙা দাঁতের শেকড় রয়ে গেছে। জিবে যে জায়গাটায় ঘা ছিল তার থেকে আরেকটা জায়গায় ছোট একটা ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। তার কারণ উপরের দুটো আক্কেল দাঁত, ৮ ও ৭ নম্বর সেই দাঁত দুটির ভাঙা অংশ ধারালো ছিল। আমরা সেই দুটি দাঁত সমান করে দিয়েছি। অন্য দাঁতগুলো ভালো আছে। আমার বিশ্বাস, জিবের ক্ষতটা চলে যাবে। তাকে (খালেদা জিয়া) মাউথওয়াশ দেওয়া হয়েছে, ওটা দিয়ে প্রতিদিন কুলি করবেন। ম্যাডামকে জিজ্ঞাসা করেছিÑ উনি বলেছেন, ‘আমার এখন আর কোনো প্রবলেম নেই।’
পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য গত ১ এপ্রিল তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে আনা হয়। জানতে চাইলে বিএসএমএমইউর পরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, ওনার চিকিৎসা কনটিনিউ হচ্ছে, আমাদের মেডিক্যাল বোর্ড তার চিকিৎসা করছেন। গ্র্যাজুয়াল ইমপ্রুভিং। আমি আগেও বলেছি, এসব ক্রনিক ডিজিজ ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস শতভাগ ভালো করা ডিফিকাল্ট। এসব মিরাক্যালি ভালো হয়ে যাবে সেটাও নয়। আমি বলব, উনি ভালো আছেন। আপনারা দেখেছেন ওনাকে। ওনাকে দেখে মনে হয়েছে কি উনি খুব বেশি অসুস্থ? উনি ভালো আছেন। আগে যেভাবে এসেছিলেন, তার চেয়ে বেটার, ডেফিনেটলি বেটার আছেন।
বিএসএমএমইউর সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ ব্রিফিংয়ে ওরাল ও ম্যাক্সিফেসিয়াল সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কাজী বিল্লুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। তিনিই প্রথমে খালেদা জিয়াকে দেখেন, এর পর তাকে পাঠানো হয় অধ্যাপক শামসুল আলমের কাছে।
বিএসএমএমইউ পরিচালকের সংবাদ ব্রিফিংয়ের পর বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদশ-ড্যাবের নেতারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ড্যাবের বিএসএমএমইউ শাখার সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নানবিধ সমস্যা। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ রাখছি, তার সর্বোচ্চ সুচিকিৎসা যেন দেওয়া হয়। আমরা ডাক্তার হিসেবে দূর থেকে যতটুকু দেখেছি, ম্যাডাম অত্যন্ত অসুস্থ। ওনার আরও ভালো ও উন্নত চিকিৎসা দরকার। এ সময় ড্যাব নেতা অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম সেলিম, আ ন ম মনোয়ারুল কাদির বিটু, এহতেশামুল হক তুহিন, সাইফুদ্দিন নেসার আহম্মেদ তুষার, রেজাউল আলম, কামরুজ্জামান মিন্টু, শাকিল আহম্মেদ, ইয়াহিয়া খান, মহিলা দলের সাবিনা ইয়াসমীন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। তার জীবন আজ অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার রোষানলে বিপন্ন। জেলে রেখে দেশনেত্রীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়াই মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর মূল লক্ষ্য। পথের কাঁটা সরাতে শেখ হাসিনা নির্বিবেক। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, এবার প্রতিহিংসাপরায়ণতার রাজনীতি বন্ধ করুন। অনেক হয়েছে, এবার থামুন। অবিলম্বে নয়, আজই খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার সুযোগ দিন। প্রতিদিন তার শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি ঘটছে।
Comment here