হেফাজতে নিয়ে কী করেছিল মালয়েশিয়ার পুলিশ, জানালেন রায়হান - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
আন্তর্জাতিক

হেফাজতে নিয়ে কী করেছিল মালয়েশিয়ার পুলিশ, জানালেন রায়হান

অনলাইন ডেস্ক : দেশে ফিরেছেন মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি তরুণ রায়হান কবির। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১টায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের এমএইচ-১৯৬ ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। দেশে ফেরার পর তাকে নিয়ে যান তার বাবা শাহ আলম।

মালয়েশিয়ায় পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার থাকা অবস্থায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ‘মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ’ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রায়হান কবির। দেশে ফেরার পর বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান রায়হান।

রায়হান বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা দফায় দফায় আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় কৌশলে আমার ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা করা হয়েছে, যেন আমি আমার বিবৃতি পরিবর্তন করি। কিন্তু আমি আমার বক্তব্য পরিবর্তন করিনি।’

পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন প্রথম ১৪ দিন একাধিক সংস্থার সদস্যরা রায়হানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তিনি বলেন, ‘আমার কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, আল-জাজিরার সাথে আমার যোগাযোগ কীভাবে হলো, সরকারের সমালোচনা করার জন্য আমাকে টাকা দেওয়া হয়েছে কি না, আমার পেছনে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার ইন্ধন আছে কি না-এই ধরনের প্রশ্ন করা হতো আমাকে। আমার মনে হয়েছে, তারা চাচ্ছিল আমি যেন বিবৃতি দেই যে, কারও মাধ্যম হয়ে আমি সাক্ষাৎকার দিয়েছি।’

রায়হান আরও বলেন, ‘আমি সেখানকার শ্রমিকদের দুর্ভোগ নিয়ে নিজে থেকেই কথা বলেছি আল-জাজিরার সাথে। আমি তাদের বারবার বলেছি যে, আমি মালয়েশিয়া সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলিনি। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে অনিয়মগুলো সম্পর্কে বলেছি। পুলিশের হেফাজতে থাকার সময় দুর্ব্যবহার করা না হলেও আমাকে একটি অন্ধকার কক্ষে একা আটকে রাখা হতো। আটক থাকাকালীন সময়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা কয়েকবার আমার সঙ্গে দেখা করেন।’

গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১টায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের এমএইচ-১৯৬ ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন রায়হান কবির। বিমানবন্দরে প্রিয় ছেলেকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা অপেক্ষায় ছিলাম কবে আমাদের রায়হান আমাদের কাছে আসবে। আজ রায়হান এসেছে। আমরা ঈদের চাঁদ হাতে পেয়েছি। এই আনন্দ বুঝিয়ে বলতে পারব না।’

এ সময় রায়হানের কাছে কেমন লাগছে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই আনন্দ বলে বোঝাতে পারব না। গত ছয় বছরে কতবার যাওয়া-আসা করেছি। এবার অন্যরকম অনুভূতি। আমার বাংলাদেশ। আমার মাটি। আমার বাবা-মা। এই আনন্দ কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা। দেশে-বিদেশে-প্রবাসে যারা পাশে ছিলেন, সবার কাছে কৃতজ্ঞতা।’

শুক্রবার রাতে পুত্রজায়া ইমিগ্রেশন অফিস থেকে রায়হানকে সরাসরি বিমানবন্দরে নেওয়া হয়। সব প্রক্রিয়া শেষ করে মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় রাত ১১টায় তাকে বিমানে তোলা হয়। এর আগে করোনার পরীক্ষায় তার নেগেটিভ প্রতিবেদন আসে। যেহেতু রায়হানের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া পুলিশ কোনো অভিযোগ আনেনি, কাজেই তাকে কোনো আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে না।

গত ৩ জুলাই আল-জাজিরার ইংরেজি অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ‘লকডআপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট’ শীর্ষক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি লকডাউন চলাকালে দেশটির সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণের বিষয়টি উঠে আসে। আল-জাজিরায় সাক্ষাৎকার দেওয়ায় রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ২৪ জুলাই গ্রেপ্তার হন তিনি। তাকে মালয়েশিয়ায় কালো তালিকার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের ২১টি সংগঠনসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই গ্রেপ্তারের নিন্দা জানায় এবং অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করে।

রায়হানের বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে। বাবা-মা আর দুই ভাই-বোনের পরিবার। স্থানীয়রা বলছেন, বন্দরে নিজ এলাকাতেও সবার কাছে প্রতিবাদী তরুণ হিসেবে পরিচিত রায়হান। এলাকার সবার বিপদে-আপদে পাশে থাকতেন। নিজের বই, টাকা দিয়ে সাহায্য করতেন শিক্ষার্থীদের। এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে দারুণ সোচ্চার ছিলেন তিনি। সবার বিপদে পাশে থাকতেন।

Comment here