নিজস্ব প্রতিবেদক : হোটেল রোজ ভ্যালির ৩০৩ নম্বর কক্ষে বসে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ড. সারওয়ার আলী হত্যাচেষ্টার ছক তৈরি করা হয়। আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান পিবিআই ঢাকা মহানগর (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদ।
বশির আহমেদ জানান, পলাতক নাজমুল নামের এক যুবকের নেতৃত্বে সাতজন যুবক এ হামলার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেছিল। রাজধানীর আশকোনা এলাকার হোটেল রোজ ভ্যালির ৩০৩ নম্বর কক্ষে এ হামলার ছক তৈরি করা হয়।
এর আগে এ ঘটনায় ড. সারওয়ার আলীর গাড়িচালক হাফিজ ও দারোয়ান হাসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রিমান্ড শেষে গত শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করলে ওই ঘটনার পরিকল্পনায় নিজেরা জড়িত থাকার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন।
আজ উত্তরা এলাকা থেকে মো. ফরহাদ (১৮) নামের আরেক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ সুপার মো. বশির জানান, গত ৫ জানুয়ারি রাতে সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ও ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী উত্তরার নিজ বাসায় স্ত্রী ডা. মাখদুমা নার্গিসসহগত টিভি দেখছিলেন। এমন সময় তার বাসার তিন তলায় বসবাসরত তার মেয়ে ড. সায়মা আলীর বাসার দরজায় অজ্ঞাতনামা দুজন দুর্বৃত্ত এসে কড়া নাড়ে। তার মেয়ে দরজার ছিটকিনি খুললে অজ্ঞাতনামা দুজন দুর্বৃত্ত বাসার ভেতরে প্রবেশ করে তার মেয়ে, জামাই ও নাতনির গলায় ছুড়ি ধরে। এরপর তাদের মধ্যে একজন তার মেয়েকে ছেড়ে দিয়ে চার তলায় ড. সারওয়ারের বাসায় কড়া নাড়ে। ডা. সারওয়ার দরজার ছিটকিনি খুলে দিতেই জোরপূর্বক ভেতরে প্রবেশ করে তাকে মেঝেতে ফেলে গলায় ছুড়ি ধরে এক দুর্বৃত্ত। ওই সময় তার স্ত্রী চিৎকার করলে তিন তলার অপর অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্ত চার তলায় আসে। তার স্ত্রীর চিৎকার শুনে দুই তলার ভাড়াটিয়া মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) সাহাবুদ্দিন চাকলাদার ও তার ছেলে মোবাশ্বের চাকলাদার ওরফে সজিব চার তলায় আসেন। সাহাবুদ্দিন চাকলাদার দুর্বৃত্তদের একজনকে জাপটে ধরেন এবং তার ছেলে সজিব একটি গ্লাস হাতে নিয়ে অপর দুর্বৃত্তকে লক্ষ্য করে ছুড়ে মারেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
এসপি বশির বলেন, ‘ঘটনার পরে ডা. সারওয়ার আলীর মেয়ে ৯৯৯-এ ফোন দিলে দ্রুত পুলিশ গিয়ে দুর্বৃত্তদের ফেলে যাওয়া একটি মোবাইল সেট, সাতটি চাপাতি, সিমকার্ডবিহীন একটি মোবাইল, আইপ্যাড, নাইলনের দড়িসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করে। পরে ডা. সারওয়ার আলী তার বাসার দারোয়ান মো. হাসান ও পূর্বের ড্রাইভার নাজমুলসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।’
গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা জানান, ওই ঘটনার এজাহারভুক্ত আসামি নাজমুল ও গ্রেপ্তার আসামি ফরহাদসহ আরও অজ্ঞাতনামা পাঁচজন ঘটনার আগের দিন ৪ জানুয়ারি রাজধানীর আশকোনা এলাকায় হাজী ক্যাম্পের সামনে একটি হোটেলে নাস্তা করে ও হামলার পরিকল্পনা করে। পরে ঘটনার দিন ৫ জানুয়ারি ৫টার সময় আশকোনা এলাকার হোটেল রোজ ভ্যালির ৩০৩ নম্বর কক্ষে নাজমুলের নেতৃত্বে উল্লেখিত সাতজন দুর্বৃত্ত হামলার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। ঘটনার মূল হোতা নাজমুল বাসার পরিবেশ, কক্ষ, পার্কিং প্লেস ইত্যাদি সম্পর্কে সকলকে অবগত করে এবং হামলার সময় কার কী ভূমিকা হবে, তা বুঝিয়ে দেয়। নাজমুল অন্যদের জানায়, ডা. সারোয়ার আলীর বাসায় নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার রয়েছে।
হামলার দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এসপি বশির বলেন, ‘ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে আসামি ফরহাদসহ ছয়জন দুর্বৃত্ত ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়। আসামি নাজমুল একটি ব্যাগে করে সাতটি চাপাতি ও সাতটি সুইচ গিয়ার ছুরি নিয়ে ঘটনাস্থল এলাকায় এসে প্রত্যেককে একটি করে ছুরি দেয়। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী অজ্ঞাতনামা দুজন ছুরি নিয়ে বাসার উপরে ওঠে এবং নাজমুলসহ পাঁচজন বাসার নিচে অবস্থান করে। নিচে থাকা দুর্বৃত্তদের বাসার ভেতরে প্রবেশের কথা থাকলেও ভুক্তভোগী পরিবার ও প্রতিবেশিদের চিৎকার শুরু হওয়ায় উপরে থাকা দুই দুর্বৃত্ত দৌড়ে নিচে চলে আসলে সকল দুর্বৃত্ত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।’
এসপি বশির জানান, এ ঘটনায় হোটেল রোজ ভ্যালি থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং সাতজনেরই উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ঘটনায় জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে।
Comment here