২ হাজার শিক্ষার্থীর উকিল হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গের পথে - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
শিক্ষাঙ্গন

২ হাজার শিক্ষার্থীর উকিল হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গের পথে

নিজস্ব প্রতিবেদক : আদালতের রায় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আদেশ অমান্য করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলো আইন বিভাগের প্রতি সেমিস্টারে ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায় আইনে স্নাতক দুই হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত ভর্তি করা শিক্ষার্থীদের আইনজীবী অন্তর্ভুক্তি (এনরোলমেন্ট) পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অতিরিক্ত অর্থের লোভে বাড়তি ভর্তির এই খেসারত গুনতে হচ্ছে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীকে। আজ রোববার ওই শিক্ষার্থীদের পক্ষে সুপ্রিমকোর্টে ‘ল রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এভাবে হয়রানি বন্ধ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে এসব শিক্ষার্থীর আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন যাতে ভঙ্গ না হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী, আদালত, বার কাউন্সিলসহ সংশ্লিষ্টদের মানবিক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে সেগুলো হলো, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ডেফোডিল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামি ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং ফরিদপুরের টাইমস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।

২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল ইউজিসি এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেখানে প্রতি সেমিস্টারে ৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয় ওই নির্দেশনা অনুসরণ না করায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘এইচএসসি পাসের পর আমরা বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের স্নাতক পড়তে আসি। একজন এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীর পক্ষে কখনো বার কাউন্সিল, ইউজিসি বা হাইকোর্ট সম্পর্কে জানার কথা নয়। তাই ইউজিসি, বার কাউন্সিল বা হাইকোর্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে সেমিস্টার প্রতি ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি না করানোর বিষয়ে যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন, তা আমাদের জানার কথা না। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করালে তার দায় ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়কেই নিতে হবে।’

তারা আরও বলেন, ‘নিয়ম অনুসারে আইন পাসের পর আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষা দিতে হলে সিনিয়র আইনজীবীর অধীনে ছয়মাস শিক্ষানবীশ থাকতে হয়। আমরা বার কাউন্সিলের অনুমতি সাপেক্ষে (ইন্টিমেশন ফরম) ওই ছয়মাস সময় পার করেছি। অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি বাণিজ্যের কারণে বার কাউন্সিল আমাদেরকে আসন্ন ২২ নভেম্বরের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ হিসেবে রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেওয়া থেকে বঞ্চিত করছে।’

ভুক্তভোগী এসব শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘স্নাতক পাস করাসহ বার কাউন্সিলের সকল নিয়ম আমরা পূর্ণ করেছি। অথচ এতদিনের পালিত স্বপ্ন পূরণে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ না পেয়ে আমরা হাইকোর্টে রিট দায়ের করি। হাইকোর্ট আমাদেরকে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দিতে আদেশ দেন। পরে বার কাউন্সিলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করেছে। এখন রিটটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য রয়েছে। অন্যদিকে বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় দুই বা তিন বছর পরপর অনুষ্ঠিত হওয়ায় আসন্ন ২২ নভেম্বরের পরীক্ষায় যদি অংশ গ্রহণ করতে না পারি তাহলে আমাদের এই দুই হাজার শিক্ষার্থী পরিবারের সদস্যদের অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’

লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক পাসের পর আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রত্যেক আইনের শিক্ষার্থী আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকে। এমনকি ওই শিক্ষার্থী স্বপ্নের সঙ্গে তার পরিবারের স্বপ্নও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। তাই অনেক চড়াই উৎড়াই পার করেই নিজেকে যোগ্যতা প্রমাণের মধ্য দিয়েই স্নাতক পাস করা আইনের শিক্ষার্থীকে আইনজীবী হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন বিভাগে ভর্তি বাণিজ্য বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খামখেয়ালিপনার দায় শিার্থীদের ওপর না চাপিয়ে ভুক্তভোগী দুই হাজার শিার্থীকে বার কাউন্সিলের পরীক্ষার সুযোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তপে চেয়েছেন এসব শিক্ষার্থী। এ ছাড়া আদালত ও বার কাউন্সিলকে মানবিক হওয়ারও আহ্বান জানান তারা।

Comment here