নভেল করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ ৩৮ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে শুক্রবার পর্যন্ত ওমিক্রনের সংক্রমণে কারও মৃত্যু হয়নি বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলেছে- নতুন এই ধরন তুলনামূলক বেশি সংক্রামক হতে পারে। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। খবর রয়টার্স
ব্যাপকভাবে জিনগত পরিবর্তনে সক্ষম এই ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে বিশ্বব্যাপী নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। সবশেষ যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় স্থানীয়ভাবে ওমিক্রনে সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ওমিক্রনের প্রকোপে দক্ষিণ আফ্রিকায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩০ লাখ।
ডব্লিউএইচও গতকাল জানিয়েছে, ওমিক্রনের সংক্রমণে এখনো কোনো মৃত্যুর কথা তারা জানতে পারেনি। তবে নতুন এই ধরন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় সব দেশকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে সংস্থাটি বলেছে, আগামী কয়েক মাসে ইউরোপে মোট কোভিড সংক্রমণের অর্ধেকই হতে পারে ওমিক্রনের কারণে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা গতকাল বলেন, ডেলটার মতো নতুন এ ধরনও বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি কমিয়ে দেবে। ওমিক্রন নিয়ে প্রাথমিক একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা। সেখানে দেখা গেছে, ডেলটা ও বেটা ধরনের তুলনায় ওমিক্রনের পুনরায় সংক্রমিত করার ক্ষমতা তিনগুণ বেশি। এ ছাড়া আগে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে গড়ে ওঠা প্রতিরোধব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার সক্ষমতা ওমিক্রনের রয়েছে।
রেডক্রসের প্রধান ফ্রান্সেসকা রোকা বলছেন, বিশ্বব্যাপী টিকাদানের হারে বৈষম্যের কারণে কত বড় বিপদ আসতে পারে, ওমিক্রনের সংক্রমণ তার প্রমাণ।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখ্য বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন, ওমিক্রনই হতে পারে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ধরন। কারণ এটি সবচেয়ে সংক্রামক। গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ওমিক্রনে করোনার টিকা কাজ করবে কিনা, সেটি নিয়ে কথা বলার মতো সময় এখনো আসেনি।
ডব্লিউএইচওর আরেক কর্মকর্তা মাইক রায়ান বলেন, ওমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রচলিত করোনার টিকা পরিবর্তন করতে হবে- এমন কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত নেই। বর্তমানে বাজারে থাকা টিকার মাধ্যমে আরও বেশি লোককে টিকা প্রয়োগের দিকে কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পরিচালক রোচেল ওয়ালেনস্কি জানান, বিশ্বের ৪০ দেশে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
এদিকে ওমিক্রন সম্ভবত ঠান্ডা-জ্বরের জন্য দায়ী- অপর ভাইরাসের জেনেটিক উপাদানের অংশকে বেছে নিয়ে নিজের জিনগত একটি বিন্যাস ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। তারা বলেছেন, আক্রান্ত একই কোষে ঠান্ডা-জ্বরের ভাইরাসের সঙ্গে ওমিক্রনের এই জিনগত বিন্যাস আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।
ক্যামব্রিজ ম্যাসাচুসেটসভিত্তিক ডেটা বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান এনফারেন্সের কর্মকর্তা ভেনকি সৌন্দরাজন বলেছেন, জিনগত বিশেষ এই বিন্যাস ঘটিয়ে ওমিক্রন নিজেকে মানুষের শরীরে প্রবেশের জন্য আরও বেশি উপযোগী করে তুলেছে। আর এটি তাকে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দিতে সহায়তা করেছে।
Comment here