৪ জুন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কী ঘটেছিল - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ঢাকাসমগ্র বাংলা

৪ জুন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কী ঘটেছিল

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসড়ক ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক। ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ উত্তরবঙ্গের প্রায় ২৩টি জেলার যানবাহন এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে। ঈদসহ যেকোনো উৎসবের ছুটিতে এই সড়কে যানজট স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। কিন্তু এবার ঈদুল ফিতরে মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে চার লেনের সুবিধা এবং টাঙ্গাইল পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতা থাকায় যানজটের সম্ভাবনা ছিল না বললেই চলে।

সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই চলছিল। কিন্তু ঈদের আগের দিন গত ৪ জুন মঙ্গলবার সকালে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টাঙ্গাইলের পাকুল্লা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তির শিকার হয় ঘরমুখো হাজার হাজার মানুষ। অতিরিক্ত গাড়ির চাপে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে সিরাজগঞ্জ এলাকার যানজটের কারণে টাঙ্গাইল অংশেও সেই যানজট ছড়িয়ে পরে। সেতুতে গাড়ি স্থির থাকায় বন্ধ হয়ে যায় টোল আদায় কার্যক্রম।

এদিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনের বাম্পার টু বাম্পার আটকা থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন যাত্রীরা। তাদের মধ্যে কিছু মানুষ উত্তেজিত হয়ে টাঙ্গাইলের রসুলপুর এলাকায় প্রশাসনের একটি গাড়িতে আগুণ ধরিয়ে দেন ও আরেকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। অন্যদিকে গাজীপুর থেকে কুড়িগ্রামগামী এক অন্তঃসত্ত্বা নারী যানজটে আটকে পড়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ে গোলচত্বর এলাকায় মেয়ে সন্তান প্রসব করেন। আবার মহাসড়কের ঢাকাগামী লেন ফাঁকা দেখে ব্যাট-বল হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে ক্রিকেট খেলেন কয়েকজন যাত্রী।

ওই বিষয়গুলো গণমাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যাপকভাবে প্রচার হলে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। পরে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান মহাসড়ক পরিদর্শন এসে আগুন দেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের জানান।

ওই দিন ঢাকা থেকে ভূঞাপুরগামী আজহারুল ইসলাম তালুকদার নামের এক যাত্রী পরিবারসহ যানজটে আটকা পরেছিলেন টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস এলাকায়। তিনি বলেন, ‘আমরা একটানা প্রায় ৫ ঘণ্টা জ্যামে ছিলাম। আামদের অদূরেই কিছু মানুষ উত্তেজিত হয়ে টায়ারে ও গাড়িতে আগুন দেয়। তাদের কথা বার্তা এরকম ছিল যে, আমরা বাড়ি যেতে পারছি না, তাই আর কাউকেই যেতে দেব না।’

গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী হানিফ পরিবহনের এক বাসচালক এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বলেন, ‘শুনলাম সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে গাড়ি টানতে পারছে না। তাই আমরাও যেতে পারছি না। তবে রাস্তায় পুলিশের ভূমিকা ভালো।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) এর বঙ্গবন্ধু সেতুর এলাকার নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার আহসানুল কবির পাভেল বলেন, গত ৪ জুন সকাল ৬টা ৫০ থেকে ৯টা ২০ মিনিট পর্যন্ত আমরা টোল আদায় করতে পারি নাই। কারণ অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সিরাজগঞ্জ এলাকায় গাড়ি পাস হচ্ছিল না। সেতুর ওপর গাড়ি আটকে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।’

আহসানুল কবির পাভেল আরও বলেন, ‘সেতুর পশ্চিম প্রান্তে পুলিশের তৎপরতা নিয়ে আমি সন্দিহান।’

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমরা তখন ডিউটিতে ছিলাম। সেতুর পশ্চিম প্রান্ত, সিরাজগঞ্জ এলাকার কড্ডার মোড়, হাটিকমরুল ও নলকা ব্রিজে যানজটের কারণে আমাদের পূর্ব প্রান্তেও তীব্র যানজট লাগে। কারণ পূর্ব প্রান্তের গাড়িগুলো পশ্চিম প্রান্তে ঢুকতে পারছিল না।’

এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন সেতু দিয়ে ১৪-১৫ হাজার যানবাহন পাড়াপাড় হয়ে থাকে। কিন্তু ঈদে সেটা দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যায়।

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান মনির বলেন, ‘সোমাবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেতু দিয়ে ৩৫ হাজার ২৭১টি যান পাড়াপাড় হয়েছে। আর টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৫ হাজার ৩৭০ টাকা, যা অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে।’

এবিষয়ে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ আহাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘ঈদে যানজট নিরসনে ও মহাসড়কে যাতায়াতকারীদের নিরাপত্তার জন্য টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের সাত শতাধিক সদস্য নিয়োজিত আছেন। ঈদের পুরো সময় মহাসড়ক স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু অতিরিক্ত গাড়ির চাপে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যানবাহন অতিক্রম করতে না পারায় এবং সিরাজগঞ্জ এলাকায় পুলিশের জোরালো তৎপরতা না থাকায় মঙ্গলবার সকালে যানজট সৃষ্টি হয়। সেই যানজট টাঙ্গাইল অংশে ছড়িয়ে ভোগান্তির শিকার হন অসংখ্য মানুষ। তবে যানজটের সময় গাড়ি পোড়ানো অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। এর জন্য আইনগত ব্যবস্থা হবে।’

Comment here