স্বামী দিতেন ১১শ টাকা, খরচ চালাতে না পেরে দুই সন্তানকে হত্যা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

স্বামী দিতেন ১১শ টাকা, খরচ চালাতে না পেরে দুই সন্তানকে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিয়ের এক যুগ পার হলেও স্বামীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো পপির। মাঝে মাধ্যে গায়ে হাতও তুলতেন পপির স্বামী মোজাম্মেল হোসেন বিপ্লব। তবে এত অশান্তির মধ্যেও ওই সংসারে জন্ম নেয় দুই সন্তান আলভি (৭) ও জান্নাত।  কিন্তু স্বামী ঠিক মতো সংসার খরচ না দেওয়ায় জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে ওঠায় দুই সন্তানকে হত্যার পর নিজেও শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান পপি।

স্বামী-স্ত্রীর অমিল এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে, স্বামীকে গ্রামে রেখে পপি একাই তার দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। তবে পপির স্বামী সন্তানদের দেখতে মাঝে মাঝে ঢাকায় আসতেন। কিন্তু দুই সন্তানের লেখাপড়ার বা সংসারের খরচের জন্য তেমন টাকা দিতেন না। দুই সন্তানের পড়াশোনা ও আনুসাঙ্গিক খরচ বহন করতে তাই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিলেন পপি।

এতকিছুর পরেও সন্তানদের কথা ভেবে স্বামীকে ডিভোর্স দেননি। কিন্তু কয়েক দিন আগে পপিকে তার বাবার কাছে থেকে ১০ লাখ টাকা আনার জন্য চাপ দেন স্বামী মোজাম্মেল হোসেন বিপ্লব। এত টাকা দেওয়ার মতো সক্ষমতা ছিল না পপির বাবার। তাই টাকার কথা বাবাকে বলেননি পপি। অপর দিকে স্বামী বারবার টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন তাকে।

টাকার জন্য স্বামীর অত্যাচার, অপর দিকে দুই সন্তানের লেখাপড়া এবং ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন পপি। অবশেষে গতকাল শুক্রবার রাতে সিদ্ধান্ত নেন দুই সন্তানকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই সন্তানকে হত্যা করলেও নিজে আত্মহত্যা করতে পারেননি তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন পপি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পপি, তার আত্মীয়-স্বজন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা গেছে।

ঢাকা মেডিকেলে পপি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে ঘুমন্ত দুই শিশু জান্নাত ও আলভীকে হত্যার পরিকল্পনা করি। প্রথমে আগুনে পুড়িয়ে ও পরে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করি।’

মা হয়ে কেন এমনভাবে নিজের সন্তানদের হত্যা করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারছিলাম না। সংসার চালানো যাচ্ছিল না। স্বামী সংসার খরচ দিত মাত্র ১ হাজার ১০০ টাকা। ওই টাকায় কিছুই করা যাচ্ছিল না।’

আমার মেয়ে আমাকে কিছুই বলে নাই

পপির স্বামী যে ব্যবসার জন্য ১০ লাখ টাকা চেয়েছিলেন এবং সেই টাকার জন্য প্রায়ই পপির সঙ্গে ঝামেলা হতো- এসব কিছুই জানতেন না বলে জানিয়েছেন নিহত দুই শিশুর নানা আবু তালেব।

তিনি দৈনিক আমাদের অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘পপির স্বামী  মোজাম্মেল হোসেন বিপ্লব মুন্সিগঞ্জে একটি ইলেকট্রিকের ব্যবসা করে। প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় আসে। কিন্তু সে (পপির স্বামী) যে, ব্যবসার জন্য ১০ লাখ টাকা চেয়েছে আমাকে পপি তা কোনোদিন বলে নাই।’

পপি তার দুই সন্তানকে হত্যা করেছে এটা কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পপি দুই বাচ্চারে খুন করেছে। এটা সত্য। সে তো নিজেই স্বীকার করেছে। কিন্তু কেন মা হয়ে এমনটা করলো সেটা কেউই কী ভেবে দেখবে না।’

খিলগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা যায়, মা পপিই দুই সন্তানকে খুন করে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। স্বামী মুন্সিগঞ্জ থাকেন।’

আত্মীয়দের ফোনে বাসায় ডাকে পপি              

দুই সন্তানকে হত্যার পরে পপি তার কয়েকজন আত্মীয়কে ফোন করে সকালে বাসায় ডেকেছিলেন। কিন্তু কাউকেই দুই সন্তানের হত্যার বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পপির এক আত্মীয় দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে বলেন, ‘পপি মধ্যরাতে ফোন করে বলে সকালে যেন তার বাসায় হাজির হই। কারণ জানতে চাইলে সে কিছুই বলে নাই।’

সন্তানদের লাশ খাটে রেখে মেঝেতে সারা রাত বসে ছিলেন মা

দুই সন্তানকে হত্যার পরে সারা রাত ঘরের মেঝেতে বসে ছিলেন পপি। অবশেষে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি।

ওই বাসার ভাড়াটিয়া জানান, পপির গায়ে আগুন লাগার কিছু সময় পরেই আশেপাশের মানুষ বিষয়টি টের পায়। পরে ঘরের মধ্যে ঢুকে পপিকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সে সন্তানদের হত্যা করে সারা রাত মেঝেতে বসে বসে কিছু একটা চিন্তা করছিল বলে মনে হয়েছে।

খিলগাঁও থানার মোল্লা ভবন নামে এক বাড়ি থেকে আজ শনিবার সকালে  দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে থানা পুলিশ।

নিহত শিশুরা হলো- আলভি (১০) ও জান্নাত (১২)। তারা ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের চতুর্থ ও প্রথম শ্রেণির ছাত্রী।

মা শিশু দুটিকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে ছুরি ও বটি উদ্ধার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে খিলগাঁও থানার এসআই মো. হাবিব রহমান দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে বলেন, ‘ওই মা নিজেই দুই সন্তানকে গলা কেটে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে।’

খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মশিউর রহমান জানান,  পপি নামে ওই নারী পুলিশ পাহারায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। নিহত দুই শিশুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ওই নারী নিজেই দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। তবে এই ঘটনার সঙ্গে অন্য কেউ যুক্ত আছেন কি না, সব কিছু তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Comment here