নিজস্ব প্রতিবেদক,নারায়ণগঞ্জ : করোনাভাইরাসের এই সংকটের সময় কম খেয়ে হলেও নিজ সংসদীয় এলাকার মানুষদের খাওয়ানোর কথা বলেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন শামীম ওসমান। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বর্তমান সময়ে করণীয় সম্পর্কে জানাতেই এ ব্রিফিং করেন তিনি।
শামীম ওসমান বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার ও আমার বড় ভাই সেলিম ওসমানের সংসদীয় (নারায়ণগঞ্জ-৫) এলাকার একজন মানুষকেও না খেয়ে মরতে দেবো না। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি আমাদের যা আছে তা নিয়েই সবাই ভাগ করে খাব। প্রয়োজনে কম খাব, তবু সবাইকে নিয়ে খাব।’
নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্দেশে শামীম ওসমান বলেন, ‘আপনারা যদি সাহসী হন, তাহলে ঘরে থেকে তা প্রমাণ করুন। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘরের বাইরে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো কোনো বাহাদুরির কাজ নয়।’
বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি অনেক ভালো দাবি করে সরকার দলীয় এই প্রভাবশালী এমপি বলেন, ‘পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা অনেক ভালো ইনশাল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত পদক্ষেপে এখনো আমরা ভালো আছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবিসহ আমরা জনপ্রতিনিধিরা একযোগে কাজ করে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষের কাজ হচ্ছে তারা নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং সর্বোপরি দেশের ভালোর জন্য এই মুহূর্তে ঘরে থাকবেন।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরেই আমি ও আমার পরিবার গোপনে ১৫-২০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। কিন্তু এখন প্রকাশ্যে সহায়তা করতে চাচ্ছি। কারণ আমরা চাই, এ কাজে যেন সমাজের সামর্থ্যবানরাও এগিয়ে আসে। অন্যদের মধ্যেও যেন উৎসাহ তৈরি হয়।’
খাদ্য ও নগদ সহায়তার জন্য নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা অনুদান ঘোষণা করেন শামীম ওসমান। এ ধরনের অংক অনুদানের কারণ হিসেবে তিনি আল্লাহ’র ৯৯টি গুণবাচক নামের কথা উল্লেখ করেন। তার এই অনুদান আগামীকাল শুক্রবার থেকে বিতরণ শুরু হবে বলেন তিনি জানান।
শামীম ওসমান সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘রাসূল (সা.) এর সুন্নত অনুযায়ী আমরা যারা সামর্থ্যবান আছি, তারা যদি নিজ নিজ এলাকার প্রতিবেশীদের খোঁজ রাখি তাহলে এ অবস্থায় সবাইকে নিয়ে ভালো থাকা সম্ভব। ত্রাণ বিতরণের সময় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় থাকা উচিত। কারণ একজন বারবার ত্রাণ সহায়তা পেলো কিন্তু অনেকে একবারও পেলো না, সেটি হলে সমস্যার সমাধান হবে না।’
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এই এমপি বলেন, ‘সমাজের একটি শ্রেণি রয়েছে যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত। যারা অভাবে থাকলেও মুখ ফুটে চাইতে পারেন না লজ্জায়। এ শ্রেণির মানুষের সমস্যা আগামী সপ্তাহেই শুরু হবে। কারণ তাদের হয়তো কিছু দিনের খাবার কেনা রয়েছে। কিন্তু ওষুধ কেনার টাকা নেই অথবা বাচ্চার দুধ নেই। এই শেণিকে খুঁজে বের করে তাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সহায়তা দিয়ে আসতে হবে।’
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে শামীম ওসমান বলেন, ‘এখানে উপস্থিত অনেকেই রয়েছেন যাদের আর্থিক অবস্থা হয়তো ভালো নয়। তাদের কেউ দুশ্চিন্তা করবেন না। আমি আপনাদের ভাই। এ মুহূর্তে আপনারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের জন্য, সমাজের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু সততার সঙ্গে কাজ করে যান। সংকটময় এ অবস্থায় আমি আপনাদের পাশে থাকব ইনশাল্লাহ।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘এ মুহূর্তে কোনো দল নাই। দল একটাই আমরা সবাই মানুষ। বিপদে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে এটাই বড় ধর্ম। এ অবস্থায় কে-কোন দল করে সেটি দেখা হবে না। সবাই এইযোগে এ অবস্থার মোকবিলা করব।’
চিকিৎসকদের উদ্দেশে এই এমপি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের দুটি সরকারি হাসপাতালসহ বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে যেন করোনার রোগী ছাড়াও অন্য রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়।’ এ জন্য তিনি সিভিল সার্জনের দৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দেওয়ার কথাও জানান শামীম ওসমান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইমতিয়াজ আহমেদ ও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক। ব্রিফিং শেষে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের সরকারি চিকিৎসকদের জন্য ৪০০ পিপিই সিভিল সার্জনের কাছে হস্তান্তর করেন।
Comment here