নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে সংসদে আনা একটি শোক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। আজ রোববার এই দুই জ্যেষ্ঠ নেতার শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য।
শোক প্রস্তাবের আলোচনায় দুই নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেশে ফেরার পর রাজনীতি করার মত ছিল না। পদে পদে আমাকে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ সময় যে দুজনকে আমি সব সময় পাশে পেয়েছি, একই দিনে তাদের হারালাম।’
তাদের পরিবার সদস্যদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
আজ রোববার বেলা ১১টার পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। দিনের কার্যসূচিভুক্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত করে সম্পূরক কার্যসূচির অংশ হিসেবে শোক প্রস্তাব তোলেন স্পিকার।
‘ওয়ান-ইলেভেনের’ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তখনকার সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মোহাম্মদ নাসিম কারাগারে থাকা অবস্থায় স্ট্রোক করে পড়ে ছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই সময় কারাবন্দী সালমান এফ রহমানের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স সবসময় জেলগেইটে রাখা থাকত তার পরিবারের পক্ষ থেকে। ওই অ্যাম্বুলেন্সে করে মোহাম্মদ নাসিমকে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় বলে তিনি সেই যাত্রায় বেঁচে যান। তবে ওই সময় তার শরীরের একপাশ অবশ হয়ে যায়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘অনেক কষ্ট বুকে নিয়ে এখানে দাঁড়াতে হচ্ছে। মাত্র ১০ তারিখে আমরা পার্লামেন্ট শুরু করলাম। তখন একজন মাননীয় সংসদ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। শোক প্রস্তাব নিয়েছি। কয়েকটা দিন গেল। আজ ১৪ তারিখ। আমরা হারালাম আমাদের সংসদের সদস্য মোহাম্মদ নাসিমকে। সকালে পেলাম তার মৃত্যুর খবর, আর রাতে ১০টা-সাড়ে ১০টায় আবদুল্লাহ সাহেবের কথা শুনলাম অসুস্থ। হাসপাতালে নিতে হবে।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে না গিয়ে নিয়ে যাওয়া হল সিএমএইচে। যাওয়ার পথে জাহাঙ্গীর গেইট পার হতে না হতে একটা অ্যাটাক হলো। খুব অল্প সময়ে মধ্যে পরপর তিনটা অ্যাটাক। একই দিনে দুজনের মৃত্যু। আমাদের জন্য এত কষ্টকর…।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করেনাভাইরাসে এমন একটি অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যে দলের কেউ মারা গেলে তার পরিবারের কাছে ছুটে গিয়ে সান্ত্বনাটুকু তিনি দিতে পারছেন না।
তাকে সংসদে আসতেও অনেকে বাধা দিয়েছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
অন্যদের মধ্যে বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, মতিয়া চৌধুরী, মৃণাল কান্তি দাস, হাবিবে মিল্লাত, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।
পরে দুই নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সংসদে মোনাজাত করা হয়। তার আগে তাদের স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন। পরে সংসদের বৈঠক সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছিল ৭২ বছর বয়সী মোহাম্মদ নাসিমের। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় গতকাল শনিবার সকালে মারা যান আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য।
আর এদিন রাতে বেইলি রোডের বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহকে ঢাকা সিএমএইচে নেওয়া হয়। সেখানে রাত পৌনে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
সে সময় জানানো হয়েছিল, ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর ‘হার্ট অ্যাটাক’ হয়েছিল। মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষা করে জানা যায়, তিনি করোনাভাইরাসেও আক্রান্ত ছিলেন।
Comment here