গাজীপুর সদর প্রতিনিধি : গাজীপুরের শ্রীপুরের মুলাইদ গ্রামের আমতলী এলাকায় মাত্র ১ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া বাকি থাকায় আলী হোসেন নামের (৮০) বৃদ্ধের টং দোকান বিক্রি করে দিয়েছেন এক স্কুল শিক্ষক। এ ঘটনায় বৃদ্ধ বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় অভিযুক্ত শিক্ষক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক মুজাহিদুল ইসলাম মল্লিক ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া গ্রামের মফিজ মল্লিকের ছেলে। তার স্ত্রীর হেলেনা মল্লিক শ্রীপুরের মুলাইদ তালতলি গ্রামের হেলাল উদ্দিনের মেয়ে। মুজাহিদুল ইসলাম মল্লিক ভালুকা উপজেলার সোনারবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরের শ্বশুরবাড়িতে বাড়ি স্থাপন করে পরিবারসহ বসবাস করে আসছেন।
বৃদ্ধ আলী হোসেনের ভাষ্য, তার ভিটেমাটি নেই। তিনি রোগাক্রান্ত হওয়ায় কাজ করতে পারেন না। একসময় ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরে সামান্য সঞ্চয় জোগাড় করে গত দুই বছর আগে স্থানীয় স্কুলশিক্ষকের আমতলী মোড়ের একটি শিল্প কারখানার সামনে কয়েকফুট জায়গা মাসে ১ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া নিয়ে নিজের খরচে একটি টং দোকান ঘর স্থাপন করেন। এতে তার যে আয় হতো তাতে কোনোমতে পাঁচ সদস্যের সংসারের জীবিকা চলত। তার পরিবারের একমাত্র আয়ের ব্যবস্থা ছিল এই ক্ষুদ্র দোকান ঘিরে।
আলী হোসেনে জানান, মূল সমস্যায় তিনি পড়েন করোনাকালীন সময়ে। লকডাউন থাকায় তিনি দোকান পরিচালনা করতে পারেনি। ফলে ভাড়া বাকি পড়েছিল তিনমাসের। ৪ হাজার ৫০০ টাকার জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এই স্কুলশিক্ষক ও তার স্ত্রী। বারবার হুমকি দেওয়ায় কয়েকদিন আগে তিন হাজার টাকাও পরিশোধ করেন। বাকি টাকা পরিশোধে সময় প্রার্থনা করেন। এতেও ক্ষান্ত হননি এই স্কুলশিক্ষক। তিনি স্থানীয় শহীদ মিয়ার কাছে মালামালসহ দোকান বিক্রি করে দেন।
ভুক্তভোগী এই বৃদ্ধ আরও জানান, ১ হাজার ৫০০ টাকার জন্য স্কুল শিক্ষক তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছেন। দোকানের বিভিন্ন মালামালসহ তার ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। এখন জীবন বাঁচাতে হয়তো ফের ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হবে।
তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোবারক হোসেন জানান, সামান্য ভাড়া নিয়ে বৃদ্ধের এই দোকান বিক্রি করে দেওয়া সত্যিই অমানবিক। তিনি নিজেও স্কুলশিক্ষককে বকেয়া ভাড়া পরিশোধ সাপেক্ষে দোকানের তালা খুলে দিতে বলেছিলেন কিন্তু সে কথা স্কুল শিক্ষক মানেনি।
অভিযুক্ত শিক্ষক মুজাহিদুল ইসলাম মল্লিকের ভাষ্য, জমি নিয়ে তার সমস্যা থাকায় তিনি এই বৃদ্ধকে উচ্ছেদ করেছেন। স্থানীয় কিছু ব্যক্তি হয়ত তাকে ইন্ধন দিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
শ্রীপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাইনউদ্দিন জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। একজন অসহায় লোকের দোকান বিক্রি করে খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই স্কুলশিক্ষক। তাকে বুঝানো হয়েছে তিনি যাতে বৃদ্ধের সবকিছু বুঝিয়ে দেন। নাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Comment here