নুসরাতকে হয়রানি করেন থানায় ওসিও - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

নুসরাতকে হয়রানি করেন থানায় ওসিও

মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ করতে গিয়ে ফেনীর সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের হয়রানির শিকার হয়েছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। ওসি তার নিজের কক্ষে ঘটনা জানার নাম করে আরেক দফা হয়রানির করেছিলেন মেয়েটিকে। এসময় অঝোরে কাঁদতে থাকা মেয়েটির ভিডিওচিত্র ধারণ করা হচ্ছিল। তখন ওসির কক্ষে কোনো নারী, আইনজীবী বা নারী পুলিশ সদস্যও ছিলেন না। এই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে।

এটি দেখে অনেকেই নিন্দা জানাচ্ছেন, ওসির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন। কর্তব্য পালনে অবহেলার অভিযোগে ৯ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। আইনজ্ঞরা বলছেন, যৌন হয়রানির অভিযোগ করার সময় ওসির ভিডিও ধারণ করার ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তার পর সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়াও আইনসিদ্ধ নয়।

ভিডিও করার সময় নুসরাত দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছিলেন। বক্তব্য দেওয়ার সময় অঝোরে কাঁদছিলেন। ওসি বারবারই ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনো তোমাকে কাঁদতে হবে।’ ভিডিওতে দেখা যায়, থানার ভেতরে নুসরাতকে জেরা করা হচ্ছে ‘কীসে পড়ো? ক্লাস ছিল?’ ‘কারে কারে জানাইসো বিষয়টা?’ নুসরাত যখন জানান তাকে অধ্যক্ষ ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন, তখন প্রশ্ন করা হয়, ‘ডেকেছিল, নাকি তুমি ওখানে গেছিলা?’ পিয়নের মাধ্যমে ডেকেছিল বলে নুসরাত জানালে প্রশ্ন করা হয়, ‘পিয়নের মাধ্যমে ডেকেছিল? পিয়নের নাম কী?’ নুসরাত তখন পিয়নের নাম বলেন, ‘নূর আলম।’

বক্তব্য দেওয়ার সময় নুসরাত কাঁদতে থাকায় ভিডিওধারণকারী তাকে ধমকের সুরে বলেন, ‘কাঁদলে আমি বুঝব কী করে, তোমাকে বলতে হবে। এমন কিছু হয়নি যে তোমাকে কাঁদতে হবে।’ ভিডিওর শেষে নুসরাতের কথা বলা শেষ হলে ধারণকারী বলেন, ‘এইটুকুই?’ আরও কিছু অশালীন উক্তির পাশাপাশি তাকে উদ্দেশ করে ওসি বলেন, ‘এটা কিছু না, কেউ লিখবেও না তোমার কথা। আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব। কিছু হয়নি। রাখো। তুমি বসো।’

সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিমের পরীক্ষার্থী নুসরাত। মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলা তাকে যৌন নিপীড়ন করেন। এ অভিযোগে নুসরাতের মা ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করলে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করা হলেও শুরুতেই ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করেছিলেন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয় অধ্যক্ষের পক্ষ থেকে।

Comment here