বইপ্রেমীদের ভিড় বাড়ছে - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

বইপ্রেমীদের ভিড় বাড়ছে

মুহম্মদ আকবর : অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় দিন গতকাল শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। তাই সকাল থেকেই মেলার প্রবেশদ্বারগুলোতে বইপ্রেমীদের ভিড় জমতে থাকে। বেলা ১১টায় প্রবেশদ্বার খুলে দেওয়ার পর কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলায় প্রবেশ করেন তারা। স্টলে স্টলে গিয়ে বইয়ের পাতা উল্টাতে দেখা যায়। কেউ আবার মনের আনন্দে ঘুরে এবং ছবি তুলে সময় কাটায়। গত দুদিনের তুলনায় গতকাল লোকসমাবেশ ছিল বেশি। প্রায় প্রতিটি স্টলের সামনেই বইপ্রেমীদের দেখা যায়। তবে সে তুলনায় বিক্রি কম। চারুলিপি প্রকাশনীর কর্ণধার হুমায়ুন কবীর বলেন, বইমেলায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসছে। বইয়ের পাতা উল্টিয়ে দেখছে। সে তুলনায় ক্রেতা কম। তবে বইপ্রেমী মানুষের এ আগ্রহ অব্যাহত থাকলে সার্বিক বিবেচনায় আগামী সপ্তাহ থেকে জমে উঠবে বলে আশা করছি। মেলা প্রাঙ্গণে এসেছিলেন ভ্রমণবিষয়ক লেখিকা লায়লা আরজুমান। তিনি স্টলে স্টলে ঘুরছিলেন জেলাভিত্তিক বই কেনার জন্য। অবশেষে শোভা প্রকাশনী থেকে ৬৪ জেলার পরিচিতিমূলক একটি বই কেনেন। বইটি হাতে নিয়ে মেলার এদিক ওদিক তাকিয়ে মুখ ভরে দম ফেললেন। কিছু জিজ্ঞেস না করতেই তিনি বলতে থাকেন, মেলাটা বেশ ফাঁকা এবং পরিচ্ছন্ন। মানুষের সঙ্গে মানুষের দূরত্বও বেশ। পরবর্তী ছুটির দিনে ছেলেকে মেলায় নিয়ে আসার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।

বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা যায়, একটি-দুটি করে নতুন বই নিয়ে আসছেন তারা। বাংলা একাডেমির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল নতুন বই এসেছিল ১০৪টি। এর মধ্যে রাজনীতি ও গবেষণা গ্রন্থ বেশি। আগামী সপ্তাহে প্রতিটি প্রকাশনী থেকে আসা নতুন বইয়ের প্রায় অর্ধেক চলে আসবে বলে প্রকাশকরা জানান।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলে দায়িত্বরত আমজাদ হোসেন কাজল জানান, আমাদের নতুন বইয়ের কাজ চলছে। কিছু বই ইতোমধ্যে চলে এসেছে। আগামী দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাকিগুলো চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মেলার অন্য প্রাঙ্গণ বাংলা একাডেমির ভেতরে বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়িন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, মুক্তধারা, শিল্পকলা একাডেমি, প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত স্টলে গবেষণাধর্মী বই থাকলেও সেদিকে তেমন উঁকি দিতে দেখা যায়নি বইপ্রেমীদের। বলা যায় গত তিন দিন ধরে অলস সময় কাটাচ্ছেন তারা।

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে আবুল মোমেন লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক সাহেদ মন্তাজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আবুল কাশেম এবং ফওজুল আজিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক খুরশীদা বেগম।

প্রাবন্ধিক বলেন, ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭২ গণপরিষদে খসড়া শাসনতন্ত্র অনুমোদন উপলক্ষে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের আলোকে দেশের চারটি মৌলিক আদর্শ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ১২ অক্টোবর ১৯৭২ স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের অধিবেশনে তিনি এ সংবিধানকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্দেশনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন অর্থাৎ এটির মূল ভাবধারাকে স্থায়ী হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন তিনি। ৪ নভেম্বর ১৯৭২ সংবিধান বিলের ওপর দীর্ঘ ভাষণেও তিনি এর মূল চার স্তম্ভের কথা আবেগ দিয়ে আবারও বলেছেন। এভাবে স্বাধীনতার স্বপ্ন এক ব্যক্তি থেকে জাতির অন্তরে সঞ্চারিত হয়েছে, স্বপ্ন একদিন আকাক্সক্ষায় রূপ নিয়েছিল, তারপর তা হয়েছে অঙ্গীকার এবং শেষে ধরা দিয়েছে বাস্তবে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থেকে তা রূপ পেয়েছে বাস্তব স্বাধীন দেশে।

আলোচকবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ও ঘোষণাপত্র নিয়ে অনেক অযথা বিতর্কের জন্ম দেওয়া হয়েছে, এ সম্পর্কিত ইতিহাসকে রাষ্ট্রীয় প্রভাব খাটিয়ে বিকৃত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু এ দেশের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বাধীনতার রূপকল্প একাত্তরের বহু আগেই তৈরি করে রেখেছিলেন। ১৯৭১-এর ৭ই মার্চ তার ঐতিহাসিক বক্তৃতার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সূত্রগুলো এ দেশের জনগণের কাছে উপস্থিত করে, তাদের আসন্ন মুক্তিযুদ্ধের জন্য তৈরি করে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির অবকাশ নেই। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নির্মাণ-কল্পনা প্রকাশ করেন, যা যুগ যুগ ধরে স্বাধীনতা সংহত করার প্রেরণা দিয়ে যাবে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক খুরশীদা বেগম বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এক ও অভিন্ন। বাংলা ও বাঙালির নেতা হিসেবে বস্তুত তিনিই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার অধিকার সংরক্ষণ করতেন এবং তার ঘোষণাতেই স্বাধীনতার সংগ্রাম আনুষ্ঠানিক রূপ পায়।

এদিন ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন আবদুস সেলিম, শাহেদ কায়েস এবং আঁখি হক।

আজ রবিবার মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন কল্যাণী ঘোষ, বুলবুল মহলানবীশ এবং আশরাফুল আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রামেন্দু মজুমদার।

 

Comment here