নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় টেউ মোকাবিলায় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে সর্বদলীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। আজ শুক্রবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, ‘আবারো প্রস্তাব রাখছি, সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে, জনগণকে সম্পৃক্ত করে-তাহলেই শুধুমাত্র এই সমস্যার সমাধান করা যাবে। বিশাল এই চ্যালেঞ্জ তা জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া সম্ভব নয়। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হলে-রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি সকল স্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এই ব্যাধির ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিতে হবে এবং তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে এই মোকাবিলা করার যুদ্ধের সঙ্গে। আসুন আমরা জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই সংকট মোকাবিলায় উদ্যোগ নেই মানুষ বাঁচাই, দেশ বাঁচাই।’
‘সর্বাত্মক লকডাউন অর্থ কী’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকার যে লকডাউন ঘোষণা করেছে সেটা ক্যারিআউট হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতু মন্ত্রী বলেছেন যে, ১৪ এপ্রিল থেকে নাকি সর্বাত্মক লকডাউন করা হবে। সর্বাত্মক লকডাউনের অর্থ কী? দিন আনে দিন খাওয়া শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাচালক, বাসায় কাজ করা মানুষ, ইনফরম্যাল সেক্টর, ছোট ছোট ফ্যাক্টরিতে কাজ করে তাদের ব্যবস্থা কী হবে? তা এখন পর্যন্ত আমরা জানি না। গত বছর সরকার একটা প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছিলেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের খুব বেশি উপকার হয়নি বরং দুর্নীতি বেশি হয়েছে।’
জীবন-জীবিকা রক্ষা করা বড় প্রয়োজন
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন ও জীবিকাকে রক্ষা করা বড় প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে আহ্বান করব প্রতিটি ইনফরম্যাল সেক্টরের উদ্যোক্তাদের যথেষ্ট পরিমাণ প্রণোদনা দিতে হবে। এই ইনফরম্যাল সেক্টরে যারা কাজ করছেন, শ্রমিক রয়েছেন বিভিন্ন দোকান-শিল্পকলকারখানায় তাদেরকেও ভাতা প্রদান করতে হবে এবং সেটা যতদিন এই সমস্যা থাকবে বিশেষ করে লকডাউন থাকবে তাদেরকে ভাতা প্রদান করতে হবে। বিশেষ করে যারা একেবারে দিন আনে দিন খায় তাদেরকে ব্যাপক হারে ত্রাণ সামগ্রি দিতে হবে তাদের বেঁছে থাকার জন্য, টিকে থাকার জন্য।’
টিকা নিশ্চিত করার দাবি
সব মানুষের জন্য করোনার টিকা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে যেটা জানতে পেরেছি, বাংলাদেশকে যদি আপনার হার্ড ইম্যুনিটির মধ্যে আনতে হয় তাহলে কমপক্ষে সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। আমাদের প্রস্তাব, মানুষের মধ্যে হার্ড ইম্যুনিটি তৈরি করতে সাড়ে ১২ কোটি টিকা সংগ্রহ করতে হবে। এই টিকা সংগ্রহ করতে এখনই ব্যবস্থা গ্রহন, রোডম্যাপ কিভাবে আসবে-বিতরণ হবে তৈরি করতে হবে।’
আইসিইউ ব্যবস্থা এক বছরেও গড়ে তোলা হয়নি
করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন হাসপাতালে বেড ও আইসিইউ সংকট, করোনা পরীক্ষার অপ্রতুলতাসহ যে দুরাবস্থা চলছে তার জন্য সরকারের ‘ব্যর্থতা, উদাসীনতা, সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেয়া হলেও সরকারের পক্ষ থেকে হাসপাতালগুলোকে করোনা চিকিৎসার উপযোগী করা হয়নি। তাছাড়া হাসপাতালকে কোভিড-নন কোভিড চিহ্নিত করে আলাদা না করায় দেশে স্বাস্থ্য সেবায় চরম নৈরাজ্য পরিলক্ষিত হয়েছে। দেশের অন্তত ৪৬টি জেলায় যথাযথ চিকিৎসার সুবিধা সম্বলিত আসিইউ হাইফ্লো অক্সিজেন/ ভেন্টিলেটর ব্যবস্থা এক বছরেও গড়ে তোলা হয়নি। দেশের ৭৯টি সরকারি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরির কার্যক্রম হাতে নেয়া হলেও সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা ও উদাসীনতায় ৫০% অগ্রগতিও হয়নি এক বছরে।’
আর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-ছলচাতুরি নয়
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘গত বছর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে করোনা টেস্ট করা হয় ১ লক্ষ ৭ হাজার ৭০৩ জনের। এবার এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ২ লক্ষ ৫০ হাজারের মতো। এবার কিন্তু টেস্ট বেশি করা উচিত ছিল, সেটাও করতে পারেনি। মহামারি মোকাবিলায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর ধারে কাছেও আমরা যেতে পারিনি। তাই জনগণের প্রশ্ন জেগেছে- টেস্ট বাড়ানো কমানো সরকারের অপকৌশল কিনা। অবশ্যই একটা অপকৌশল। এ প্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য হলো করোনা নিয়ে আর কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-ছলচাতুরি নয়।’
Comment here