রাজধানীর হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাহমিদা হক লাবণ্য নিহত হওয়ার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া উবাবের বাইকচালক সুমন ওই দিন লাবণ্যকে পেছনে বসিয়ে বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাচ্ছিলেন। একইসঙ্গে নিজের ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ বারবার বাইকের ব্রেক চাপছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ওই ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে উবার কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক গাফিলতিরও প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
আজ রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার দুজন হলেন কাভার্ডভ্যানের চালক আনিসুর রহমান ও উবারের চালক মো. সুমন হোসেন। এ সময় কাভার্ডভ্যান ও রাইড শেয়ারিংয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও জব্দ করা হয়েছে।
ঘটনা সম্পর্কে ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ’গত ২৫ এপ্রিল সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে রাজধানীর হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য নিহত হয়েছেন। লাবণ্য শ্যামলি এলাকার নিজ বাসার সামনে থেকে উবারের বাইকে করে খিলগাঁও ছায়াবিথী এলাকায় যাচ্ছিলেন। উবার বাইকচালক সুমন বেপরোয়া গতিতে লাবণ্যকে নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। বেপরোয়া গতির বাইকটি হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে আসা বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ডভ্যান বাইকটিকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় লাবণ্য বাইক থেকে পড়ে যান এবং কাভার্ডভ্যানের চাকায় চাপা পড়েন। এরপর পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক লাবণ্যকে মৃত ঘোষণা করেন।’
উপকমিশনার আরও বলেন, ’ঘটনার পর থেকেই উবারচালক ও ঘাতক কাভার্ডভ্যানচালককে আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করে পুলিশ। ঘটনাস্থলের আশে-পাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দুর্ঘটনার স্পষ্ট কিছু পাওয়া যাচ্ছিল না। বাইকচালক সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও পুলিশ যাওয়ার আগে ফোন বন্ধ করে পালিয়ে যান। হাসপাতালে সে যেই ঠিকানা দিয়েছিল, সে অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে জানা যায় ভুল ঠিকানা দিয়েছিল।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ডিসি বলেন, ‘চালককে খুঁজে পেতে উবার কর্তৃপক্ষের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য চাওয়া হলেও তারা কোনো সহযোগিতা করেননি। মোটরবাইকচালক সুমন উবারে রেজিস্ট্রেশনের সময় ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছিল। উবারের কাছে তার যে ঠিকানা ছিল, সেখানে খোঁজ নিয়েও সত্যতা পাওয়া যায়নি। উবারের এসব গাফিলতির কারণে সুমনকে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে। পরে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় মোহাম্মদপুর থেকে বাইকচালক সুমনকে আটক এবং বাইকটি জব্দ করা হয়।’
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘উবারচালক সুমনের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেলেও সে অনেক কিছুই আড়াল করার চেষ্টা করছিল। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পেছনের একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় কাভার্ডভ্যানটি পাওয়া যায়। ফুটেজে ভ্যানটির নম্বর পাওয়া না গেলেও ‘ইনফো ফোর্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়। পরে খোঁজ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির তেজগাঁও এলাকার অফিসে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়া প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অফিস থেকে ঘাতক চালক আনিসুরকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
বাইকচালক ও কাভার্ডভ্যানচালককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিসি বলেন, ‘দুজনই বেপরোয়া গতিতে ড্রাইভ করছিলেন। বাইকের চেয়ে যেহেতু কাভার্ডভ্যানের গতি বেশি, সেহেতু কাভার্ডভ্যানটি বাইকটিকে ওভারটেক করার সময় ধাক্কা দেয়। তখনই বাইকের যাত্রী লাবণ্য রাস্তায় পড়ে যান এবং কাভার্ডভ্যানের চাকায় পিষ্ঠ হন।’
রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির বিষয়ে যাচাই-বাছাই ছাড়া ভুল ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশন করে ফেলল উবার কর্তৃপক্ষ, যার ফলে রাইডার সুমনে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হলো। যেকোনো ঘটনার পর অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে আমরা দ্রুত চেষ্টা করি, কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের পদে পদে বাধা পেতে হলো। তাছাড়া, উবারসহ এসব রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো বানিজ্যিকভাবে চালানোর জন্য চালকের শারীরিক ও মানষিক দক্ষতা রয়েছে কি না, সেগুলোও যাচাই-বাছাই করেন না। রাইড শেয়ারিংয়ে আরোহীর ব্যবহৃত হেলমেটের গুণগতমান খুবই নিম্ন। যার কারণে দুর্ঘটনা হলে ওই হেলমেট দিয়ে সেফ থাকা যায় না।’
গাফিলতির জন্য উবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে কি না, জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার আরও তদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় যারই গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যাক, তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে।’
Comment here