নিজস্ব প্রতিবেদক : অবসরের পর প্রধান বিচারপতির জন্য মাসে ৭০ হাজার টাকা বিশেষ ভাতার বিধান রেখে একটি আইনের খসড়া সংসদে উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২২’ সংসদে উত্থাপন করেন।
পরে ৩০ দিনের মধ্যে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি সংসদে তোলার অনুমতি চাইলে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ তাতে আপত্তি করেন।
অবশ্য পরে তিনি বলেন, বিল নিয়ে তার আপত্তি নেই। ১৯৮২ সালে সামরিক আমলে অধ্যাদেশ দিয়ে এ সংক্রান্ত আইন করা হয়েছিল। সেটি বাতিল করে বাংলায় নতুন আইন করতে বিলটি আনা হয়েছে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, অবসরের পর প্রধান বিচারপতি তার জীবদ্দশায় গৃহসহায়ক, গাড়িচালক, দারোয়ান সেবা, সাচিবিক সহায়তা এবং অফিস কাম বাসভবনের রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা পাবেন। এই ব্যয় নির্বাহের জন্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রতি মাসে ৭০ হাজার বিশেষ ভাতা পাবেন।
সর্বশেষ ২০১৬ সালে বিচারকদের বেতন ও ভাতা বাড়ানো হয়। বর্তমানে প্রধান বিচারপতি এক লাখ ১০ হাজার টাকা, আপিল বিভাগের বিচারক এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক ৯৫ হাজার বেতন পান। এছাড়া বেতনের ৫০ শতাংশ হারে বিশেষ ভাতা পান তারা।
বিলে বলা হয়েছে, একজন বিচারককে তার মোট কর্মকালীন ছুটির শর্ত অনুযায়ী অর্ধ গড় বেতনে মোট ৩৬ মাসের অধিক ছুটি মঞ্জুর করা যাবে না। কোনো বিচারকের প্রকৃত কর্মকালের এক-চব্বিশাংশ মেয়াদ পর্যন্ত তাকে পূর্ণ গড় বেতনে ছুটি মঞ্জুর করা যাবে। পূর্ণ গড় বেতনে ছুটি এককালীন পাঁচ মাস এবং অন্য ছুটি এককালীন ১৬ মাসের বেশি মঞ্জুর করা যাবে না। কোনো বিচারক পূর্ণ গড় বেতনে ছুটিতে থাকাকালে নির্ধারিত মাসিক বেতনের সমান হারে ছুটিকালীন বেতন প্রাপ্য হবেন। কোনো বিচারক অনভিপ্রেত কোনো আঘাতের কারণে অথবা দায়িত্ব পালনকালে আহত হয়ে কাজ করতে অক্ষম হলে বিশেষ অক্ষমতাজনিত ছুটি প্রাপ্য হবেন।
বিলে আরো বলা হয়েছে, বিচারকদের পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুর করার এখতিয়ার থাকবে রাষ্ট্রপতির হাতে। অবসরে যাওয়া বিচারকরা উৎসব ও বাংলা নববর্ষ ভাতা পাবেন। কোনো বিচারক অনুমোদিত ছুটি বা অবকাশের অতিরিক্ত অনুপস্থিতিকালের জন্য কোনো বেতন প্রাপ্য হবেন না।
বিলে উচ্চ আদালতের বিচারকদের ছুটি, ছুটি নগদায়ন, আনুতোষিক ও পারিবারিক পেনশন, ভবিষ্য তহবিল ও পেনশন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে।
এদিন আইনমন্ত্রী বিলটি সংসদে তোলার অনুমতি চাইলে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, বিচারকদের আরো সুযোগ দেন। আরো বিচারক নিয়োগ দেন। বিচারপ্রার্থী বিচার পেতে পেতে মারা যাচ্ছে। কিছুদিন আগে দেখলাম, হাজী সেলিম ১০ বছরের দণ্ডিত হয়ে বিদেশে গেলেন চিকিৎসা করতে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর আইনমন্ত্রী কথা বললেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী (খালেদা জিয়া) বিদেশে চিকিৎসার জন্য আবেদন করেছেন, বলেছেন সুযোগ নেই। বিরোধী দলের কর্মসূচি পালনের অধিকার আছে কিনা? আপনারা কর্মসূচি করছেন; এখানে বৈষম্য হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশকে কী সভ্য, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলতে পারব? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নারীকে যেভাবে নিপীড়ন করেছে। ছাত্রলীগ নামধারী গুণ্ডারা যা করেছে, আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আইন তৈরি করছেন, মানুষের জন্য করছেন তো? আইনের ব্যাপারে আপত্তি নেই। কিন্তু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশে বড় সংকট সুশাসনের।
জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, দুঃখে কাঁদবো না হাসবো- বুঝতে পারছি না। আমাকে আপনার (স্পিকার) মাধ্যমে তিনি যে জ্ঞান দিলেন, আমার না হয় কাজে লাগবে। কিন্তু উনার কতটুকু কাজে লাগবে জানি না। পঁচাত্তরে জাতির পিতার হত্যার পর বিচার হয়েছিল? ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ করে বিচার পাওয়ার পথ বন্ধ করেছিলেন। উনারা বলবেন খন্দকার মোশতাক করেছিলেন। তারপর আপনারা ক্ষমতায় ছিলেন। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ তুলে নিয়েছিলেন? আমাকে বিচার শেখাচ্ছেন। এইসব জ্ঞান উনাদের মিটিংয়ে দেন। আমাদের দেওয়ার দরকার নেই।
Comment here