ভার্সিটির অধীনে এখনই সরকারি কলেজ নয় - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

ভার্সিটির অধীনে এখনই সরকারি কলেজ নয়

এম এইচ রবিন : সব সরকারি কলেজ স্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এখনই যাচ্ছে না। প্রায় আট বছর আগে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বাস্তবায়নে আরো সময় নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক ৩১ মে গণমাধ্যমকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে। কোন কলেজ কোন ভার্সিটির অধিভুক্ত করা যায়, সেই কাজ শুরু হয়েছে। বিকেন্দ্রীকরণ করার লক্ষ্যে এটি করা হচ্ছে।

এই বিকেন্দ্রীকরণের প্রথম ধাপে পাঁচ বছর আগে রাজধানীর সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হয়। এই পাইলটিং কি সফল যে, সারাদেশের সব সরকারি কলেজ স্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হবে? গত রবিবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, অনেক আগে স্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল, সেখানে খুব ভালো চলছিল না বলেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল। এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের

একটা রিঅরগানাইজেশন হচ্ছে। যা দিয়ে আমরা কলেজের শিক্ষার মান উন্নত করতে পারব। যেভাবে আমাদের জনবল, জনশক্তি তৈরি করা দরকার- আমরা সেই পদ্ধতিতে যাচ্ছি। নতুন যে পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় হয়েছে, সে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সক্ষমতা এখন পর্যন্ত খুবই কম। এই জন্য এ বিষয়টি আমরা এখনই চূড়ান্ত করতে পারছি না। এটি নিয়ে আরও অনেক চিন্তাভাবনা করতে হবে। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশে কলেজ আছে প্রায় তিন হাজার। এর মধ্যে ৮৮১টি কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এত শিক্ষার্থীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমাতে নির্দেশনা দেন। এ লক্ষ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সরকারি কলেজগুলোকে সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার নির্দেশনা দেন তিনি। এই নির্দেশনার পর একই বছরের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নিয়ে সভা হয়। সভায় উপাচার্যরা কলেজগুলোকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিতে সম্মত হন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয় এমন সরকারি কলেজগুলোকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সে সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেশনজট কমাতে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম ঘোষণা করে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে দ্রুত পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হলেও ঠিকমতো ক্লাস না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নানা রকম জটিলতার কথা তুলে অধিভুক্ত করার কাজটি সময়মতো বাস্তবায়ন করা হয়নি। এরপর আবার এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাগিদ দেওয়া হয়।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা রাজধানীর সাতটি বড় সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।

শুরুতে এসব কলেজে সময়মতো পরীক্ষার ফল প্রকাশসহ শিক্ষা কার্যক্রমে বেশকিছু সমস্যা হয়। এ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছিল। তবে এখন এই কলেজগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রমেও কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় দেশের অন্য সরকারি কলেজগুলোকেও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

একসময় স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয় এমন কলেজগুলো কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এটি মূলত একটি অ্যাফিলিয়েট বিশ্ববিদ্যালয়। তখন কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। কিন্তু যে উদ্দেশ্য নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠানটি ঠিকমতো পূরণ করতে পারেনি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার মান নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কাঠামো ভেঙে দিতে বলেন। যদিও সেটি পরে আর বাস্তবায়ন হয়নি।

 

Comment here