বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলায় কানাডিয়ান দুই পুলিশ সদস্যের রি-কল মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান শুনানি শেষে দুদকের এ আবেদন মঞ্জুর করেন।
একই সঙ্গে আসামি শহিদুল ইসলামের পক্ষে মামলার প্রথম সাক্ষী বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক মুহা. মাহবুবুল আলমকে রি-কল মঞ্জুর করেন আদালত।
এর আগে, আজ কানাডিয়ান রয়েল মাউন্টেড পুলিশের লয়েড শোয়েপ ও কেবিন দুগ্গানকে দুদক পক্ষের রি-কল আবেদনের ওপর শুনানি হয়। দুদকের পক্ষে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও দুদক প্রসিকিউটর খুরশিদ আলম খান ও মোশারফ হোসেন কাজল রি-কলের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে শুনানি করেন। অন্যদিকে, আসামি গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের পক্ষে আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম রি-কল আবেদনের বিরোধীতা করেন। শুনানি শেষে আদালত আসামি পক্ষের আবেদন নামঞ্জুর করে দুদক পক্ষে রি-কল আবেদন মঞ্জুর করেন। এছাড়া এদিন আসামি শহিদুল ইসলামের পক্ষে বাদীকে রি-কল আবেদনের বিষয়েও শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করে আগামী ১২ ডিসেম্বর রি-কলের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেন। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত এ অস্থায়ী আদালতে কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
দুদকের রি-কল আবেদনে বলা হয়, আসামি গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ভিডিওতে ধারণ করা সাক্ষাৎকার এবং এ আদালতে ওই বিষয়ে বিষদ বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। সেই ভিডিওর রেকর্ড করা কপি, বর্ণনা ও ভিডিওটি আদালতে প্রদর্শনী আকারে জমা দেওয়া এবং এ আসামির স্টান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক, বাংলাদেশ সিটি ব্যাংক সিঙ্গাপুর এবং সুইজারল্যান্ডের একটি ব্যাংকসহ সব ব্যাংকের পরিচালিত হিসাবের বিবরণী প্রদর্শনী আকারে জমা প্রদান। এছাড়া আসামি শরফুদ্দিন আহমেদের নেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিডিও প্রদর্শনী আকারে জমা দিতে সাক্ষী লয়েড শোয়েপকে রি-কল করা প্রয়োজন।
গত ১৯ অক্টোবর সাক্ষ্য দিতে এ দুই সাক্ষীদের সমন পাঠানো হয়। মামলাটিতে এর আগে বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক মুহা. মাহবুবুল আলমের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
গত ১৯ মার্চ একই আদালত খালেদা জিয়াসহ ৮ আসামির অব্যাহতির আদালত নাকচ করে চার্জগঠনের আদেশ দেন। অপর আসামিরা হলেন- তৎকালীন মুখ্য সচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এমএএইচ সেলিম। এদের মধ্য প্রথম তিনজন পলাতক রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলা তদন্তের পর ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিটের বৈধতা চ্যলেঞ্জ করে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন। ২০১৫ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট রুল ডিচার্জ করে স্থাগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ অভিযোগে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগে মামলাটি করা হয়।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে অর্থ আত্মসাতের দুর্নীতি মামলায় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। তিনি ওইদিন মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর কারাগারে থাকাবস্থায় চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দেন আদালত। দণ্ডিত হওয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় একই বছর ৩০ অক্টোবর আপিলে হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।
দুই বছর জেলে থাকার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে দুটি শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন। তখন দেশে করোনা মহামারি চলছিল। এরপর থেকে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাস অন্তর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।
Comment here