তীব্র গরমে খেটে খাওয়া মানুষ বিপাকে, বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

তীব্র গরমে খেটে খাওয়া মানুষ বিপাকে, বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা

তীব্র দাবদাহে রাজধানীর খেটে খাওয়া দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়ছেন চরম বিপাকে। কায়িক পরিশ্রম করে অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠছেন তারা। এদিকে প্রচ- পিপাসাতেও মিলছে না পর্যাপ্ত সুপেয় পানি। ফলে পরিশ্রম চালিয়ে যাওয়া মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন দ্রুত। খেটে খাওয়া এসব মানুষ এখন শুধুই বৃষ্টির অপেক্ষায়।

গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের সামনে ঠেলাগাড়ি ঠেলতে দেখা যায় ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধকে। মাথার ওপর গনগনে সূর্যতাপের মধ্যে ঠেলা টানার পরিশ্রমে তৈরি হওয়া ঘাম ভাসিয়ে দিচ্ছে তার শরীর। একটু যানজট

পেলেই থেমে থাকা বাসের আড়ালে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করছেন রোদ থেকে বাঁচার। বাসগুলো চলতে শুরু করলেই আবার শুরু হয় ঠেলা টানা।

নাম জিজ্ঞেস করতেই হাঁপাতে হাঁপাতে জানান, তার নাম ছলিম মিয়া। গরমের অবস্থা জানতে চাইলে বলেন, ‘৩০ বছর ঢাকা শহরে। এরাম গরম দেখি নাই। একবার ঠেলা ঠেললে ঘামের সাথে শরীরের শক্তি সব বাইর হইয়া যায়। একটু বৃষ্টি হইলেই সব ঠিক হয়ে যাইতো।’

টানা কয়েক দিনের তীব্র দাবদাহের পরও আবহাওয়া বার্তায় কোনো সুখবর নেই। বরং দাবদাহ ক্রমশই বাড়ছে। বেশ কয়েক দিন ধরে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা গড়ে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির মধ্যে বিরাজ করছে। এতে নাকাল সব বয়সী মানুষ। প্রচ- গরমের লু হাওয়ায় কারও ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছে, আবার কারও হাত-মুখে জ্বলে যাওয়ার উপক্রম। ঘামে ভিজছে শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ। তীব্র দাবদাহে চরম বিপাকে ছলিম মিয়ার মতো খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ। অসহ্য গরমে একদিকে যেমন শারীরিক পরিশ্রম কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে শহরের সর্বত্র মিলছে না সুপেয় পানি। ফলে কমিয়ে আনতে হচ্ছে তাদের কাজের সময়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরমের উত্তাপ সইতে না পেরে কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকে। তাদের অপেক্ষা এখন শুধুই বৃষ্টির জন্য।

গতকাল বুধবার রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, কারওয়ানবাজার ও তেজগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রচ- গরমে অল্প কাজ বা হাঁটাচলা করে হাঁপিয়ে উঠছেন শ্রমজীবী মানুষরা। এ সময় কয়েকজন রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তীব্র গরম থেকে বাঁচতে প্রতিটি ভাড়ার পর আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা জিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। বংশাল এলাকার রিকশাচালক জাহিদুল বলেন, সারা রাত ঘুমাতে পারি না গরমে, সাথে আছে ছারপোকার কামড়। আর দিনে রিকশা নিয়ে বের হলেও রোদের তাপে বাঁচা যাচ্ছে না। জানান, আগের চেয়ে কম সময় রিকশা চালান। কয়দিন ধরে আয়পত্তরও কমে গেছে।

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় দেখা যায়, খাবার পানি বিতরণ করছেন কয়েকজন যুবক। সেখানে ভিড় জমিয়ে পানি পান করছেন বেশ কয়েকজন রিকশাচালক, দিনমজুর ও পথচারী। প্রচ- গরমে খেটে খাওয়া মানুষদের পিপাসা দূর করার জন্য নিজ উদ্যোগেই খাবার পানি বিতরণের কাজটি করছেন তারা।

পনি সংগ্রহে আসা নির্মাণ শ্রমিক বাদল বলেন, কাজ করলেই পানির পিপাসা ধরে। কিন্তু পানি পাওয়া যায় না সবসময়। কিছু ভালো মানুষ আছেন যারা এ রকম রাস্তায় রাস্তায় পানি খাওয়াচ্ছে। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ভাসমান পান বিক্রেতা গফ্ফার বলেন, গত তিন দিন ধরে রাস্তায় নামলেই তাপে পুড়ে যাচ্ছি। চেষ্টা করছি ছায়ায় দাঁড়ায়ে বেচা-বিক্রি চালাতে। কিন্তু এক জায়গায় দাঁড়ায়ে থাকলে তো বিক্রি ভালো হয় না। কবে যে একটু বৃষ্টির দেখা পাব আল্লাহ জানে।

Comment here