তাওহীদুল ইসলাম : রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে দুর্নীতি-অনিয়ম কমছেই না। পাইলট নিয়োগ, উড়োজাহাজ লিজ, বিদেশে স্টেশন ম্যানেজারের দুর্র্নীতি, টিকিট বিক্রিতে জালিয়াতিসহ নানা কায়দায় অনিয়ম হচ্ছে সংস্থাটিতে। এবার ১২টি প্রাইভেট কার কেনার ক্ষেত্রেও অনিয়মের আয়োজন চলছে। পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে দরপত্রে বিশেষ শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ওই প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যরা দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের অপতৎপরতার ফলে গাড়ি কেনায় প্রতিযোগিতার সুযোগ কমবে। অথচ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দর কমিয়ে আনা, একচেটিয়া বাণিজ্য রোধ করাই দরপত্র আহ্বানের বড় সার্থকতা। এ কারণে বিমানের মহাব্যবস্থাপকের (প্রকিউরমেন্ট) কাছে পিপিআর বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ধরে চিঠি দিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে- নির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে শুরু থেকেই চেষ্টা চালিয়ে আসছে বিমানের একটি চক্র। এ নিয়ে তিনবার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রথম আহ্বান করা দরপত্রে বিশেষ শর্ত যুক্ত করা হয়। লিখিত অভিযোগের পর ওই শর্ত প্রত্যাহার করে দ্বিতীয়বার দরপত্র আহ্বান করে বিমান। তখন পছন্দের প্রতিষ্ঠানটি বাদ পড়ে (কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়নি)। তাই চলতি মাসে তৃতীয়বারের মতো দরপত্র আহ্বান করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এবারও বিশেষ শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। শর্তে এমন স্পেসিফিকেশন দেওয়া হয়েছে, যাতে বিশেষ কোম্পানিটি ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারবে না। এতে অন্য একটি কোম্পানির পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। এবারের দরপত্রে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- (ই) ‘নাম্বার অব ভালবস অ্যান্ড অ্যারেঞ্জমেন্ট’-এ বলা আছে ১৬ ভালবস উইথ ডুয়েল ভিভিটি-আই টেকনোলজি। ইঞ্জিন আউটপুট নিয়ে বলা আছে ৭৫-৮০ কেডব্লিউ হারে ৫০০০-৬০০০ আরপিএম, ওভারঅল লেংথ ৪৪০০-৪৪৫০ এমএম, উইল বেজ ২৫০০-২৫৫০ এমএম, টায়ার সাইজ ১৮৫-১৯৫-৬০-৭০ আর ১৫।
টেন্ডার-সংক্রান্ত নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, আপত্তি জানানো কোম্পানিটি দ্বিতীয় দফায় দরপত্রে অংশ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কারিগরিভাবে বিবেচিত হয়। পরে তা বাতিল করে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয় চলতি মাসে। এবার ১২টি কার কেনার কথা বলা হলেও আগেরবার এ সংখ্যা ছিল ৮।
এভাবে বিশেষ শর্ত জুড়ে দিয়ে পিপিআর বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে চিঠি দিয়েছে ডিএইচএস মোটরস লিমিটেড। তারা হোন্ডা ব্র্র্যান্ডের গাড়ি বাজারজাত করে। অভিযোগপত্রে তারা সুনির্দিষ্টভাবে টয়োটা ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করেছে। ডিএইচএস মোটরসের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ শাহেদ আলী মাসুদ ইতোমধ্যে অভিযোগের কপি সিপিটিইউ, বেবিচকসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছেন। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে চাইলে দরপত্রের পরিবর্তে সরাসরি গেলেই হতো। এখানে টেন্ডারের নামে ঘুরিয়ে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করা হয়েছে। এটি বন্ধের জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। তিনি বলেন, ধরা যাক ৩১ লাখ টাকায় গাড়িটি মিলবে, সেটি কিনতে ৩৫ লাখ টাকা খরচ হলে অর্থ অপচয় নয় কি? প্রতিযোগিতা থাকলে তো একচেটিয়া ব্যবসা করা যায় না।
এ বিষয়ে বিমানের প্রকিউরমেন্ট শাখার কেউ কথা বলতে রাজি হননি। বিমানের জনসংযোগ শাখার উপমহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তর কথা না বললে কিছু করার নেই।
Comment here