নজরুল ইসলাম : সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপ শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি। আগামী ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিলের মধ্য দিয়ে এ আন্দোলন শুরু করবে তারা। একই দিনে পৃথকভাবে একই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলও। অর্থাৎ আগামী ২৪ ডিসেম্বর বিএনপি ও সমমনা ২৮ রাজনৈতিক দলের যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম ধাপ শুরু হতে যাচ্ছে। এ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করাই দলগুলোর মূল লক্ষ্য।
যুগপৎ আন্দোলনে একমত থাকা দলগুলো ঢাকায় ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিল করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু এ দিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন থাকায় তারা কর্মসূচি পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করে। তবে সারাদেশে ২৪ ডিসেম্বরই গণমিছিল করবে বেশিরভাগ দল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা প্রথম ধাপে শান্তিপূর্ণভাবে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে গণসমাবেশ করেছি। এখন আমরা দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের এই আন্দোলনের সঙ্গে দেশের গণতন্ত্রপন্থি সব রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির সমর্থন রয়েছে। আশা করি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এই আন্দোলন চূড়ান্ত অবস্থায় নিতে চলতি সপ্তাহে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হবে। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো একজন করে প্রতিনিধি এ কমিটিতে থাকবেন। তবে জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি এ কমিটিতে দৃশ্যমান নাও থাকতে পারেন।
গত ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগের গণসমাবেশে ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বিএনপি। কিন্তু একই দিনে (২৪ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন থাকায় ঢাকার কর্মসূচি পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আগেই ঢাকার কর্মসূচি পিছিয়ে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। সে মোতাবেক ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল এবং অন্যান্য মহানগর ও জেলায় ২৪ ডিসেম্বরে ঘোষিত গণমিছিলের কর্মসূচি ঠিক রেখেছে দলটি। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ও পৃথক বিবৃতিতে একই দিন গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা দেয় দলগুলো। এ ছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও ২৪ ডিসেম্বরের কর্মসূচি স্থগিত করেছিল। এখন তারাও বিএনপির মতোই এক পথে হাঁটছে। দলটি ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল কর্মসূচি দেবে। আর অন্যান্য মহানগর ও জেলায় ২৪ ডিসেম্বরে ঘোষিত গণমিছিলের কর্মসূচি ঠিক থাকবে।
গত ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগের গণসমাবেশে দলীয় সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ, ১০ দফা এবং যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনে নেতৃত্বে থাকা বিএনপি।
বিএনপির সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা জানান, যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি ৩০ ডিসেম্বর করার আরও কারণ রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জনগণকে ৩০ ডিসেম্বর স্মরণ করিয়ে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০১৮ সালের এই দিনে বর্তমান সরকার দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতায় এসেছে।’
এর আগে গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপি সংঘাত চায় না, শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণতান্ত্রিক পন্থায় সংকটের সমাধান চায়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতীয় সম্মেলনের জন্য বিএনপির গণমিছিলের কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তনের প্রত্যাশা করেছেন। তারিখ পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। সে জন্য আমরা দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক আচরণ করতে চাই। বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল করবে না। তবে জেলা ও মহানগরে সেদিন (২৪ ডিসেম্বর) গণমিছিল হবে।’
গতকাল জামায়াতে ইসলামীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নতুনভাবে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ২৪ ডিসেম্বর সারাদেশে ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গণমিছিল হবে। শুধু ঢাকা মহানগরীতে গণমিছিল হবে ৩০ ডিসেম্বর।’
৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সাত দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। ওই দিন বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের পর গণমিছিল বের হবে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
সংবাদ সম্মেলনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পাশাপাশি রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের লক্ষ্য সামনে রেখে লড়াই করছি। তার ভিত্তিতেই বিএনপিসহ অপরাপর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই।
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। গতকাল এক বিবৃতিতে এলডিপি প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব) ড. অলি আহমদ জানান, ৩০ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় রাজধানীর পূর্বপান্থপথের এলডিপি কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের হবে।
এদিকে ৩০ ডিসেম্বর মাঠে থাকার কথা জানিয়ে বিএনপি ঘোষিত গণমিছিলে সমর্থন জানিয়েছে আরও ১৮ রাজনৈতিক দল। তারা ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরীতে পৃথকভাবে গণমিছিলও করবে। দলগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ জাতীয় পার্টি ( জাফর), কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় দল, এনডিপি, বাংলাদেশ এলডিপি, ইসলামী ঐক্যজোট, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, ন্যাপ (ভাসানী), ডেমোক্রেটিক লীগ, পিপলস লীগ ও বাংলাদেশ ন্যাপ।
Comment here