রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মো. জুলহাস হোসেন মোল্লা (৪০) হত্যা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুটি পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের গুলশান জোনাল।
আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, জুলহাস হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল ও এর আশেপাশের সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা এবং স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে গোয়েন্দা পুলিশ নিশ্চিত হয় এ হত্যাকাণ্ডে সাজুর সম্পৃক্ততা রয়েছে। সাজুকে গ্রেপ্তারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ঘটনার আদ্যোপান্ত স্বীকার করেন।
সাজু জানায়, মূলত পশ্চিম মেরুল বাড্ডায় গাঁজার স্পট চালানো ও আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। মেরুল বাড্ডায় গাঁজার স্পট পরিচালনা করত মাদক সম্রাট ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মনির হোসেন ওরফে টারজান মনির। বিভিন্ন সময়ে তার গাঁজার স্পটের সেলসম্যানরা থানা পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়। টারজানের ধারণা, এই গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে তার স্পটের পাশেই বসবাসকারী রেন্ট-এ-কার এর ড্রাইভার জুলহাস থানা পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করে। এরই জের ধরে জুলহাসের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সে।
ঘটনার দিন মনির নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকে তার সহযোগী শাহ আলী ও সাজুকে নিদের্শনা দেয়। গ্রেপ্তারকৃত সাজু জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, টারজানের গাড়ির ড্রাইভার মনির ও সার্বক্ষণিক সহযোগী সরোয়ার এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত।
তাদের অবস্থান বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে জানা যায়, সাজুর বাবা মকবুল দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা হতে গাঁজা সংগ্রহ করে ঢাকায় এনে দিলে টারজান মনিরসহ ড্রাইভার মনির ও সরোয়ার নোয়াহ ভক্সি মাইক্রোযোগে মেরুল বাড্ডা এলাকায় সেলসম্যানদের মাধ্যমে বিক্রয় করে।
গতকাল বৃহস্পতিবার অনুমান রাত তিনটার দিকে ডিসি ডিবি উত্তর মহোদয়ের নেতৃত্বে গুলশান জোনাল টিমসহ ডিবি উত্তরের মোট তিনটি টিম মেরুল বাড্ডা এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় ঢাকা টারজানের সহযোগী মনির ও সরোয়ার একটি কালো রঙয়ের নোয়াহ ভক্সি মাইক্রোবাসটিকে প্রগতি সরণী হয়ে পশ্চিম মেরুল বাড্ডার দিকে প্রবেশ করে। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত মাইক্রোটি পথ পরিবর্তন করে আফতাব নগরের ইস্টান হাউজিং এর দিকে যেতে শুরু করে। গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক গাড়ি মাইক্রোটিকে অনুসরণ করার এক পর্যায়ে এম ব্লক এর বরই তলার সন্নিকটে মাইক্রোটি থামে।
গোয়েন্দা পুলিশ এর কর্মকর্তা, অফিসার ও ফোর্স গাড়ি থেকে নামতেই মাইক্রোটির ভেতর থেকে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা এলোপাথাড়ি গুলি শুরু করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে পলায়নরত মনির-সারোয়ারকে ২টি বিদেশি পিস্তলসহ গোয়েন্দা পুলিশ হাতে নাতে গ্রেপ্তার করে। এ সময় নিহত হন আরও দুজন। তারা হলেন, সস্ত্রাসী টারজান মনির ও অপরজন তার শ্যালক শাহ আলী। এ সময় কাছ থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল ঘটনাস্থল থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়।
পরে মাইক্রোটি তল্লাশি করে প্রায় দেড় থেকে দুই মণ গাঁজা উদ্ধার হয়। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি ডাবল কেবিন পিকআপ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ সময় তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন যাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।
Comment here