সৌদি গিয়ে হজের নামে পকেটমার - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ক্রাইম

সৌদি গিয়ে হজের নামে পকেটমার

হাবিব রহমান : হজের সময় তারা পাড়ি জমান সৌদি আরবে। হজ পালনের ছদ্মবেশে মিশে যান পবিত্র হজব্রত পালনকারী অন্যদের সঙ্গে। ভিড়ের মধ্যে সুযোগ বুঝে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের পকেট কেটে হাতিয়ে নেন ডলার, পাউন্ডসহ নানা বিদেশি মুদ্রা। এক হজ মৌসুমে চক্রটি প্রায় ২৪ লাখ বিদেশি মুদ্রা হাতিয়ে নিয়ে দেশে ফেরে। ১২ সদস্যের চক্রের দলনেতা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য।

ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, চক্রের সদস্যরা সারাবছর রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তার আশপাশের এলাকায় ছিনতাই, চুরি ও মানুষকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিত। আর হজের সময় চক্রের কিছু সদস্য সৌদি আরবে চলে যান। সর্বশেষ আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ঘরে ফেরা মানুষদের টার্গেট করেছিল চক্রটি।

গত শনিবার সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে চক্রটির ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- দলনেতা মাসুদুল হক ওরফে আপেল, রুহুল কুদ্দুস, লাবু মিয়া, সুমন ভূইয়া ওরফে সুমা, জাহিদুল ইসলাম ও দুলাল মোল্লা। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিশেষভাবে তৈরি ব্লেড, চেতনানাশক ঘুমের ট্যাবলেট, নেশাজাতীয় ঘুমের ওষুধের গুঁড়া, মলম, খুরমা-খেজুর জব্দ করা হয়। তাদের গ্রেপ্তারের পর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবি পুলিশ জানায়, মূলত বিমানবন্দর এলাকায় সক্রিয় ছিলেন তারা। বিদেশে যাওয়া কোনো যাত্রীর সঙ্গে আসা আত্মীয়স্বজনদের টার্গেট করতেন তারা। বিশেষ করে একা থাকা কাউকে দেখলে চক্রের সদস্য গিয়ে পরিচিত হতেন। টার্গেট ব্যক্তি যে জেলার বাসিন্দা বলতেন, চক্রের সদস্যও নিজেকে সেই জেলার বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দিয়ে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতেন। এক পর্যায়ে তার কাছ থেকে কিছু খেয়ে বিশ^াসযোগ্যতা অর্জন করতেন। এর পর সুযোগ বুঝে টার্গেট ব্যক্তিকে নেশা জাতীয় ঘুমের ওষুধ মেশানো খাবার খাইয়ে সর্বস্ব লুটে নিতেন। প্রয়োজন হলে টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে বাসে তার জেলার উদ্দেশ্যেও রওনা হতেন।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবি উত্তর বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মহরম আলী আমাদের সময়কে বলেন, ‘আসন্ন ঈদকে টার্গেট করেছিল তারা। যাত্রাপথে অপরিচিত কারও কাছ থেকে কিছু খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

ডিবি পুলিশ জানায়, অজ্ঞান ও পকেটমার চক্রটির ঢাকায় নেতৃত্ব দেন রুহুল কুদ্দুস। আর চক্রের মূলহোতা আপেলসহ ১২ জন হজ মৌসুমে সৌদি আরবে যান। আপেল ২০০৮ সালে প্রথম সৌদি আরবে গিয়ে হাজিদের পকেট কেটে বিদেশি মুদ্রা হাতিয়ে নিতে শুরু করেন। কিন্তু সেবার সৌদি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। পরে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফেরেন। তিনি কৌশল পাল্টে একই কাজ শুরু করেন।

ডিবি সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে কৌশলগত কারণে সৌদি রিয়েল ও বাংলাদেশি টাকা পকেট কেটে নিতেন না তারা; তবে ডলার, পাউন্ড এবং অন্যান্য দেশের মুদ্রা হাতিয়ে নিতেন।

Comment here