বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন খালেদা জিয়া : ফখরুল - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
রাজনীতি

বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন খালেদা জিয়া : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২১ আগস্টের ভয়াবহ ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন বলে দাবি করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি করেন ফখরুল।

বিএনপি মহসচিব তার পাঠানো বিবৃতিতে ২১ আগস্টের ঘটনায় খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগও নাকচ করে দেন। গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সভায় ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ত থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আপনি আমাকে মারার চেষ্টা করেছেন’। তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠান মির্জা ফখরুল।

বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, ‘২১ আগস্টের ঘটনা ভয়াবহ এবং এতে হতাহতের ঘটনা মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক। এই আকস্মিক হামলার ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া হতবাক ও বিচলিত হয়ে পড়েন, দ্রুত হতাহতদের খবর নিতে থাকেন। ঘটনার পর খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের নেত্রী আইভি রহমান এবং বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারেক সিদ্দিকীকে দেখতে সিএমএইচে যান।’

ছাত্রলীগ ও যুবলীগের উপর অভিযোগ তুলে বিএনপি মহসচিব বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা (তৎকালীন) শেখ হাসিনার বাসায় গিয়ে সমবেদনা জানাতে চেষ্টা করেন। এ জন্য নিরাপত্তা বাহিনী দিনভর চেষ্টা চালায়। কিন্তু ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অসংখ্য নেতা-কর্মী সুধা সদনের আশপাশের রাস্তা দিনরাত দখল করে রাখেন। একপর্যায়ে নিরাপত্তার অগ্রবর্তী দল হিসেবে পাঠানো প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্যকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করে সেখান থেকে বের করে দেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। বিরোধীদলীয় নেতার কাছে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নিজ স্বাক্ষরে শোক ও সমবেদনা জানিয়ে পত্র পাঠান। সেই চিঠি পৌঁছাতে গিয়ে পত্রবাহক নিজেও হামলার শিকার হন।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই ভয়াবহ হামলার ঘটনায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও মন্ত্রিসভা নিন্দা জানান। নিহত ও আহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানান এবং দোষীদের বিচারের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বোমা হামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ সার্ভিস দিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআই সদস্যরা আসেন। জাতীয় সংসদে উত্থাপিত দাবি অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত একজন বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়।’

বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘অপরিণামদর্শী’, ‘দায়িত্বহীন’, ‘বানোয়াট’ ও ‘অসত্য’ উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে কেউ কখনোই টুঁ শব্দটি করেনি। তার নাম কেউ কখনোই উচ্চারণ করেনি। এমনকি ১/১১ সরকারের সময় গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) বোমা হামলার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য নেতাদের জড়িত থাকার কোনো উল্লেখ নেই।’

ফখরুল আরও বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশি পুনঃ তদন্তের মাধ্যমে সম্পূরক চার্জশিটে তারেক রহমানসহ বিএনপির নেতাদের নাম জড়িত করা হয়। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করে পুলিশি ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কল্পিত চার্জশিট তৈরি করা হয়েছে। তারা এই দাবির সমর্থনে মুফতি হান্নানের একটি ‘বানোয়াট’ জবানবন্দি হাজির করে, যা ভিডিও করে ইউটিউবে ছাড়া হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মুফতি হান্নানকে পাশ থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা শিখিয়ে দিচ্ছেন কী কী বলতে হবে। এরপর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে আদালতে মুফতি হান্নান তার আগের জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। তাতে এই জঙ্গি নেতা দাবি করেন, তিনি স্বেচ্ছায় এ ধরনের কোনো জবানবন্দি আদালতে দেননি। ব্যাপক নির্যাতন করে সিআইডির লিখিত কাগজে তার সই আদায় করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি সংবাদ সে বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়।’

খালেদা জিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ‘মনগড়া ও ভিত্তিহীন’ মন্তব্য করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘পুরো মামলাটি বিশ্লেষণ করলে এটিই সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়- খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপিকে ধ্বংস করার একটি সুদূরপ্রসারী নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্যই ২১ আগস্ট সংক্রান্ত মামলায় বিএনপিকে জড়ানো হয়েছে। বর্তমান সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য এখনো চলমান।’

Comment here