যেসব কারণে যৌনরোগ যাদের হয় - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
লাইফস্টাইল

যেসব কারণে যৌনরোগ যাদের হয়

ডা. মো. জাহেদ পারভেজ : শরীর মানে নানা রোগের আখড়া। তবে অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানব শরীর বেশি স্পর্শকাতর। সবকিছু ঠিকঠাক না থাকলে দ্রুত রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং এমন সব ভয়ানক রোগে আক্রান্ত হয়, যা কখনো চিন্তাও করেন না। অনেকেই আছেন, যারা কিছু কিছু রোগের কথা লজ্জায় কাউকে বলতে চান না। ফলে একসময় রোগটি আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। এসবের মধ্যে যৌনরোগ মারাত্মক। আক্রান্ত পুরুষ শারীরিক সম্পর্কের সময় তার সঙ্গীর দেহে রোগ সংক্রমিত করে। এতে অসংখ্য পুরুষ রোগগুলোয় আক্রান্ত হতে পারে। তবে আমাদের দেশের মানুষ যৌনরোগে আক্রান্ত হলেও তা গোপন রাখার চেষ্টা করে, এমনকি চিকিৎসকের কাছেও, যা আদৌ উচিত নয়।

যৌনরোগ নারী-পুরু উভয়েরই হতে পারে। যথাসময়ে রোগগুলোর চিকিৎসা না করালে, অবহেলা করলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকবে। তবে অনেকে এ সমস্যা বুঝতেই পারেন না।

রোগের লক্ষণ : যৌনরোগ নিয়ে ভীতি, অজ্ঞতা বা সংকোচ আমাদের বিপদ আরও বাড়িয়ে তোলে। তাই এ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা জরুরি। এসব রোগ থেকে ক্যানসার, অন্ধত্ব, সন্তানের জন্মগত ত্রুটি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গবেষণায় পাওয়া তথ্য বলছে, পৃথিবীজুড়েই বাড়ছে যৌনরোগের প্রকোপ।

উপসর্গ : সাধারণত যৌনাঙ্গ থেকে তরল নিঃসৃত হওয়া, মূত্রে জ্বালাভাব, শারীরিক সম্পর্কের সময় ব্যথা বা রক্তপাত, তলপেটে ব্যথা, মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত এবং গলায় সংক্রমণÑ এসব উপসর্গের কোনোটি দেখলে অবশ্যই পরীক্ষা করাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এইচপিভি বা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস এমন এক ধরনের ভাইরাস, যা যৌনসম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায় এবং বেশ কয়েক ধরনের ক্যানসারের জন্য দায়ী। অনেকের মধ্যে এই ভাইরাস কোনো উপসর্গ ছাড়াই থাকতে পারে বছরের পর বছর।

নিরাপদ শারীরিক সম্পর্কের জন্য কনডম ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হলেও তা শতভাগ সুরক্ষিত নয়। সাধারণত তরলের মাধ্যমে ছড়ায় এমন সব যৌনরোগ থেকে কনডম সুরক্ষা দিতে পারে। যেমনÑ গনোরিয়া, ক্ল্যামাইডিয়া বা এইচআইভি। কিন্তু ত্বকের সংস্পর্শে ছড়ায় এমন সব যৌনরোগ, যেমনÑ সিফিলিস, হার্পিস এবং এইচপিভি আটকাতে কনডম তেমন কার্যকরী নয়।

অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা, শুধু শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমেই যৌনরোগ ছড়ায়। কিন্তু বাস্তবে যৌনরোগ সম্পর্কে এটি হলো সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা। হার্পিস বা জেনিটাল ওয়ার্ট ত্বকের সংস্পর্শের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। তাই নিয়মিত শারীরিক সম্পর্কে জড়িত থাকলে বছরে অন্তত একবার পরীক্ষা করানো উচিত।

চিকিৎসা : বেশির ভাগ যৌনরোগ উপযুক্ত চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নির্মূল করা যায়। কিন্তু চিকিৎসায় অবহেলা করলে তা ভবিষ্যতে এইচআইভির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষত যাদের সিফিলিস, গনোরিয়া বা হার্পিস হয়, তাদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই এখনই সতর্কতা প্রয়োজন।

প্রতিরোধ : যৌনরোগ প্রতিকারের জন্য যৌবনের শুরুতেই রোগের কারণ ও মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে জানা ও সচেতন হওয়া দরকার। আরও যা যা করতে হবে তা হলো কনডমের সঠিক ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে যৌনরোগ প্রতিরোধ করে।

একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়া শারীরিক সম্পর্কের পর যৌনাঙ্গ ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। রোগীর যৌনসঙ্গীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এ রোগ অন্যদের মধ্যে না ছড়ায়। প্রয়োজনে কনডম ব্যবহার করতে হবে। কেউ যদি মনে করেন তার যৌনরোগ আছে, তাহলে যত দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসা করাতে হবে। শুরুতে যৌনরোগের চিকিৎসা করা সহজ, পরে চিকিৎসা করা কঠিন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক

চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা

চেম্বার : ডা. জাহেদ’স হেয়ার অ্যান্ড স্কিনিক সাবামুন টাওয়ার, পান্থপথ, ঢাকা

০১৭০৭০১১২০০; ০১৭৩০৭১৬০৬০

 

Comment here