অনুমতি সাপেক্ষে সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন স্থাপনের ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

অনুমতি সাপেক্ষে সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন স্থাপনের ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক : পরিবেশ অধিদপ্তরসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন স্থাপনের ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই মর্মে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা’র করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে আজ বুধবার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এবং বিচারপতি রাজিক আল জালিলের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ এক সংক্ষিপ্ত রায় দেন।

সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেছেন, সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন করার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই। তবে ইকোনমিক জোন করার আগে পরিবেশ অধিদপ্তর ও নদী রক্ষা কমিশন থেকে সনদ গ্রহণ করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে নতুনভাবে আবেদন করতে হবে। এ ছাড়া রায়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। ওই কমিটি খতিয়ে দেখবে যে, অন্যের কৃষি জমি বা খাস জমি ভরাট হয়েছে কি না। খতিয়ে দেখে যদি দখল করা হয়ে থাকে সে ব্যাপারে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে রিপোর্ট দেবে। এ ছাড়া যদি অবৈধভাবে মাটি বালি ভরাট করা হয়, তা ৬ মাসের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে। যদি অন্যের জমির ভরাট করা হয়, সেক্ষেত্রে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালত আরও বলেছেন, ইউনিক প্রপার্টিজ লিমিটেডের মালিক ব্যবসায়ী মো. নূর আলী একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পাকিস্তানী আগ্রাসন থেকে দেশকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি এখন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসার পাশাপাশি জনগণের স্বার্থ রক্ষা করবেন-আমরা এটাই প্রত্যাশা করি।

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আশরাফুল কামাল বলেন, ‘ব্যবসায়ী নূর আলীর উচিত পরিবেশ বান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠা করা, যাতে করে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব তাকে অনুসরণ করে।’ যদি প্রতিবেশ এবং পরিবেশ রক্ষা করা না যায়, তবে মানুষ বাঁচতে পারে না বলেও ওই বিচারপতি উল্লেখ করেন।

আদালতে বেলা’র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রমুখ। সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি ও  সোনারগাঁও ইকোনমিক জোনের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও অ্যাডভোকেট আবু তালেব। এ ছাড়া সেনারগাঁওয়ের ওই এলাকায় ইকোনমিক জোন স্থাপনের দাবিতে ২ হাজার ৩০৭ জন ব্যক্তির করা আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী।

রায়ের পর সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন কর্তৃপক্ষের আইনজীবী আহসানুল করিম বলেছেন, হাইকোর্ট তার রায়ে বলেছেন, সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি ও  সোনারগাঁও  ইকোনমিক জোনের কোনো অংশ যদি অভৈধভাবে ভরাট করা হয়ে থাকে, অভৈধভাবে কোনো কৃষকের জমি বা কোনো খাস জমি দখল করে থাকে এবং সেই জমি ভরাট করার কারণে যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তদন্তসাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম আদালতকে বলেন, ‘ওই জোনের অধীনে বরাদ্দকৃত জমির মধ্যে কখনোই অবৈধভাবে কোনো মটি ভরাট করা হয়নি। কখনোই কোনো কৃষকের জমি, খাস জমি ভরাট করা হয়নি, কারও ফসলের জমি ভরাট করা হয়নি, দখলও করা হয়নি। তবে এক্ষেত্রে যদি কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে জোন কর্তৃপক্ষ তার দায় গ্রহণ করবে।’

এ বিষয়ে আদালত বলেছেন, যদি সোনারগাঁও ইকোনমিক জোল লিমিটেড কর্তৃপক্ষ দালিলিকভাবে লাইসেন্সের অনুমতি পান, তাহলে পরিবেশ অধিদপ্তরের যথাযথ অনুমতি নিয়ে এই ভূখণ্ডের ওপরই তার ইকোনমিক জোনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন।

জানা যায়, নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভবনাথপুর, বাটিবন্ধ এবং রতনপুর মৌজার জায়গায় ইকোনমিক জোন স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করে দেশের অন্যতম বৃহৎ আবাসন প্রতিষ্ঠান ইউনিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। এরপর ২০১৪ সালে ওই জোন স্থাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে বেলা। এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে তখন রুল জারি করে হাইকোর্ট। রুলে সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি ও সোনারগাঁও ইকোনোমিক জোন কর্তৃক মাটি ভরাটকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। এই রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকার ওই ৬টি মৌজার ২ হাজার ৩০৭ জন ব্যক্তি হাইকোর্টে একটি আবেদন দাখিল করেন। আবেদনে ওই এলাকায় ইকোনমিক জোন স্বাপনের দাবি জানানো হয়।

ওই আবেদনের আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী আদালতে বলেন, ‘ওই এলাকার কোনো জমি অবৈধভাবে ভরাট করা হয়নি। ওই জায়গায় ইকোনমিক জোন হলে আবেদনকারী ব্যক্তিরা কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। বরং ইকোনমিক জোন হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। তদুপরি ওই ইকোনমিক জোনের দুই পাশে আমান ও মেঘনা ইকোনমিক জোনসহ বেশ কয়েকটি ইকোনমিক জোন রয়েছে, যা একই শ্রেণিভূক্ত জমিতে অবস্থিত। তাই সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন স্থাপনে এলাকাবাসীর কোনো আপত্তি নেই।‘

ইকোনমিক জোনের পক্ষের আইনজীবী আবু তালেব জানিয়েছেন, ‘আদালত সংক্ষিপ্ত রায় পড়ে শুনিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার আগে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই বলা যাবে না। এ ছাড়া মামলাটি চলমান মামলা (কনটিনিয়াস ম্যান্ডামাস) হিসেবে বিবেচিত হবে মর্মে রায়ে উল্লেখ করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় এলাকার লোকজন আদালতে যে আবেদন দিয়েছেন, সে ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত রায়ে কিছুই বলা নেই। তাই বিস্তারিত রায় পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’

 

Comment here