আদালত প্রতিবেদক : অস্ত্র মামলায় ঠিকাদার এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম ও তার সাত সহযোগীর বিচার শুরু হয়েছে।
এদিকে অবৈধ মাদক বিক্রয়ের উদ্দেশে হেফাজতে রাখার মামলায় ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেছেন আদালত।
আজ বুধবার ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. রবিউল আলমের আদালতে জিকে শামীমের মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ ও খালেদের মামলায় চার্জগঠন করা হয়। এর আগে এ আসামিদের গতকাল বুধবার কারাগার থেকে ওই আদালতে হাজির করা হয়।
জিকে শামীমের অস্ত্র মামলায় মামলার বাদী র্যাব-১ এর নায়েক সুবেদার জেসিও মো. মিজানুর রহমান আসামিদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার এবং মামলা দায়ের সম্পর্কে সাক্ষ্য দেন। এরপর আসামি পক্ষের আইনজীবীরা এ সাক্ষীকে জেরা শুরু করেন।
আজ আসামি মো. জাহিদুল ইসালাম, মো. শহিদুল ইসলাম, মো. কামাল হোসেন, মো. সামসাদ হোসেনের পক্ষে জেরার পর আইনজীবী আবদুর রহমান হাওলাদার আসামি জিকে শামীমের পক্ষে জেরা শুরু করেন। তার জেরা অব্যাহত থাকাবস্থায় বিচারক আগামী ৩০ মার্চ জিকে শামীমের পক্ষে অবশিষ্ট জেরা এবং অপর আসামি মো. আমিনুল ইসলাম, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. মুরাদ হোসেনের পক্ষে জেরার দিন ধার্য করেন।
জিকে শামীমের অস্ত্র মামলায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব গত বছর ২৭ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর গত ২৮ জানুয়ারি একই আদালত আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জগঠন করেন।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়, আসামি আমিনুল ইসলাম জামালপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়েছে মর্মে ডকুমেন্ট দেখালেও তা যাচাইয়ে তার সঠিকতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই তার অস্ত্রটি অবৈধ। তিনি ওই অবৈধ অস্ত্রের নকল কাগজপত্র নিয়ে ২০১৭ সালে প্রথমে এসএম বিল্ডাস কোম্পানিতে যোগদান করেন। পরে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি আসামি জিকে শামীমের দেহরক্ষী হিসেবে যোগদান করে কাজ করে আসছিলেন। তিনি মূলত অবৈধ অস্ত্রটি ৭০ হাজার টাকায় কিনে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করেন। তাই তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের ১৯(ক)/২১/২৩ ধারার অভিযোগসহ প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৮ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৮ ধারার তার বিরুদ্ধে পৃথক একটি চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আসামিরা নিরাপত্তার অযুহাতে অস্ত্রের লাইসেন্সপ্রাপ্ত হলেও তারা শর্ত ভঙ্গ করে অস্ত্র প্রকাশ্যে বহন, প্রদর্শন ও ব্যবহার করে লোকজনের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক ও জুয়ার ব্যবসা করে স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের ১৯(ঙ)/২১/২৩ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
অপরদিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান মানিক আসামি খালেদের পক্ষে অব্যাহতির আবেদন করে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি আসামির কাছ থেকে কোনো প্রকার মাদক পাওয়া যায়নি এবং তিনি শুধুমাত্র ষড়যন্ত্রের শিকার মর্মে উল্লেখ করে অব্যাহতির প্রার্থনা করেন।
শুনানি শেষে আদালত অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে চার্জগঠনের নির্দেশ দেন এবং ওই আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সালাহউদ্দিন হাওলাদার অভিযোগ পাঠ করে শুনিয়ে দোষী না নির্দোষ জিজ্ঞাসা করলে খালেদ নিজেকে নিদোর্ষ বলে দাবি করেন। এরপর বিচারক আগামী ১ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেন।
খালেদের ৫৮০ পিস ইয়াবা ও মাদক বিক্রির ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫০ টাকা উদ্ধারের মামলায় গত বছরের ১৭ নভেম্বর চার্জশিট দেয় র্যাব।
চার্জশিটে বলা হয়, ১৯৯৬ সালে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ঢাকা মহানগর যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। ২০১২ সালে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন। ঢাকার মতিঝিলের ইয়ংমেন ক্লাব, আরামবাগ ক্লাবসহ ফকিরাপুলের অনেক ক্লাবে ক্যাসিনোর আসর বসিয়ে রমরমা মাদক ব্যবসাসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেন। তিনি খিলগাঁও-শাজাহানপুর চলাচলকারী গণপরিবহন থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। কোরবানি ঈদের সময় শাজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া, কমলাপুর, সবুজবাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করতেন। সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে রাজউক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রেল ভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ফকিরাপুলসহ বেশির ভাগ এলাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন খালেদ মাহমুদ। তার দুটি অস্ত্রের লাইসেন্সে ৫০টি করে গুলি কেনার হিসাব থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তার হেফাজত থেকে শটগানের সাতটি ও পিস্তলের নয়টি অতিরিক্ত গুলি উদ্ধার করা হয়। এগুলো ২০১৭ সালের পর নবায়ন করা হয়নি। তাই সেগুলো অবৈধ অস্ত্র।
Comment here