‘আক্ষেপ’ নিয়েই চলে গেলেন টেলি সামাদ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
বিনোদন

‘আক্ষেপ’ নিয়েই চলে গেলেন টেলি সামাদ

ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ। পর্দায় যার উপস্থিতিতে মুহূর্তেই বদলে যেত দর্শকদের মুখোছবি, স্পষ্ট হয়ে উঠতো হাসি। তার কথা বলার ধরণ-অঙ্গভঙ্গি সব কিছুই ছিল দর্শকদের বিনোদনের খোরাক। উদাহরণ হিসেবে জনপ্রিয় এই মানুষটির নাম আজও ব্যবহৃত হয়, অন্য কারো বেলায়।

জনপ্রিয় এই কৌতুক অভিনেতার আসল নাম আবদুস সামাদ। তবে রূপালি ভুবনে পা রাখার পর পাল্টে যায় তার সেই নাম, হয়ে ওঠেন টেলি সামাদ। ৭০ ও ৮০-এর দশকের শক্তিমান এই অভিনেতার জন্ম ১৯৪৫ সালের ৮ জানুয়ারি ঢাকার বিক্রমপুরে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়।

১৯৭৩ সালে নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘কার বৌ’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে পা রাখেন সামাদ। তবে ‘পায়ে চলার পথ’ ছবির মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। অভিনয়ের ক্যারিয়ারের চার দশকে প্রায় ৬০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সর্বশেষ অভিনয় করেন অনিমেষ আইচের ‘জিরো ডিগ্রী’ ছবিতে।

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর তালিকায় আছে- ‘কুমারী মা’, ‘সাথী হারা নাগিন’, ‘মায়ের চোখ’, ‘আমার স্বপ্ন আমার সংসার’, ‘রিকশাওয়ালার ছেলে’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’, ‘কাজের মানুষ’, ‘মায়ের হাতে বেহেস্তের চাবি’, ‘কে আমি’, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘মিস লোলিতা’, ‘নতুন বউ’, ‘মাটির ঘর’, ‘নাগরদোলা’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘অশিক্ষিত’, ‘জয় পরাজয়’, ‘সুজন সখী’, ‘চাষীর মেয়ে’, ‘রঙিন রূপবান’, ‘ভাত দে’ ইত্যাদি।

অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনা এবং গানের জগতেও ছিল টেলি সামাদের অবাদ বিচরণ। ‘মনা পাগলা’ নামের একটি ছবির সংগীত পরিচালনাও করেন তিনি। এরপর একে একে ৫০টির মতো ছবিতে গান গেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ছবি আঁকাতেও রয়েছে তার সমান পারদর্শিতা। শেষ জীবনে অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন তিনি। তবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পাওয়ার কারণে আজীবন আক্ষেপ করে গেছেন শক্তিমান এই অভিনেতা। মৃত্যুর কিছুদিন আগেও অকপটে সেই আক্ষেপের কথা বলে গেছেন তিনি!

২০১৬ সালে চলচ্চিত্র পুরস্কারের একটি অনুষ্ঠানে নিজের আক্ষেপের কথা জানিয়েছিলেন টেলি সামাদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি প্রায় চার দশক ধরে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত। এতগুলো বছরে আমি পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। প্রায় প্রত্যেকটি ছবিতে আমার অভিনয় প্রশংসিত ছিল। কিন্তু শেষ জীবনে এসে আমার একটাই আক্ষেপ, আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলাম না।’

টেলি সামাদ আরও বলেন, ‘আমার পুরো চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে আমি শুধু অভিনয়ের বলয়ে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখিনি। প্রযোজনা করেছি, প্রয়াত অভিনেতা দিলদারের সঙ্গে ছবিতে গানও গেয়েছি। এসবের প্রাপ্তি স্বরূপ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছি। সেসব পুরস্কারে আমার ঘর ভর্তি হয়ে আছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আমার কপালে জোটেনি।’

এর পরের বছর ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে টেলি সামাদের বাইপাস সার্জারি করা হয়। গত বছরের ২০ অক্টোবর তার বাঁ পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতেও জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। সর্বশেষ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর অসুস্থ হয়ে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। চিকিৎসক বলেছিলেন, টেলি সামাদের খাদ্যনালীতে সমস্যা রয়েছে। এছাড়াও তার বুকে ইনফেকশন হয়েছে এবং ডায়াবেটিস আছে। সেখানে ১৬ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর, বাসায় ফিরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এই অভিনেতা। ভর্তি করা হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে। শুক্রবার অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় স্কয়ার হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। টেলি সামাদের চার ছেলে-মেয়ে। দুই মেয়ের নাম কাকলি ও বিন্দু। দুই ছেলে সুমন ও দিগন্ত। এর মধ্যে বড় ছেলে সুমন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।

Comment here