দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পৌরসভার সুজালপুরের বাসিন্দা মো. শাহ আলমের খামারে ২ হাজার ৫০০ ব্রয়লার মুরগি ছিল। এর মধ্যে ২ হাজার মুরগিই গরমে ২০ ও ২১ এপ্রিল মারা গেছে। বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে মারা যায় এসব মুরগি। প্রতিটির ওজন ছিল গড়ে ১ কেজি ৩০০ গ্রাম।
চলতি দাবদাহে ক্ষতির শিকার এ খামারি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর পরিবার মুরগি পালনের ওপরই নির্ভরশীল। গরমে এত মুরগি মারা যাওয়ার ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে উঠবেন, তিনি জানেন না।
শাহ আলমের মতো সারা দেশে বহু খামারির মুরগি প্রচণ্ড গরমে মারা গেছে। এ খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে মুরগির মাংস ও ডিম উৎপাদন করছে মোটাদাগে দুটি পক্ষ। একটি বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান, অন্যটি প্রান্তিক খামারি। তবে প্রান্তিক খামারির সংখ্যাই বেশি।
করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর খামার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরিচালিত। অর্থাৎ বাইরে রোদ, বৃষ্টি, ঠান্ডা—যা-ই থাকুক, এর প্রভাব খামারের ভেতরে পড়ে না। ফলে এই গরমে প্রতিষ্ঠানগুলোর খামারের মুরগি সুরক্ষিত আছে।
কিন্তু পোলট্রি খাতে বেশির ভাগ অবদান রাখা প্রান্তিক চাষিদের খামার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরিচালিত নয়। এমন খামার তৈরির সক্ষমতা তাঁদের নেই। ফলে বাইরের গরম বা ঠান্ডার প্রভাব খামারের ভেতরেও পড়ে।
ব্রয়লারের মতো দ্রুত বর্ধনশীল মুরগির জাতগুলো উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না। বর্তমানে যে তাপমাত্রা চলছে, তা এ খাতের জন্য বিপর্যয়কর। এ থেকে মুরগি রক্ষায় শেড ঠান্ডা রাখার বিকল্প নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৭ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ব্রয়লার মুরগির জন্য সহনীয়। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলতি মাসে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি বা এর ওপরে উঠতে দেখা যাচ্ছে। এ তাপ সহ্য করতে না পেরে ‘হিটস্ট্রোকের’ মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে মারা যাচ্ছে প্রান্তিক খামারিদের মুরগি।
মুরগির মাংস ও ডিম উৎপাদন প্রধানত প্রান্তিক খামারিরা করায় তাঁরা ক্ষতির শিকার হলে এর নেতিবাচক প্রভাব এ খাতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অসহনীয় গরমের পাশাপাশি বিদ্যুতের লোডশেডিংও মুরগি মারা যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নরসিংদীর শিবপুর থানার চৈতন্যা এলাকার মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া প্রথম আলোকে জানান, তাঁর শেডের (মুরগির ঘর) মেঝে পাকা, ওপরে টিন। ঘরে ৪ হাজার ব্রয়লার মুরগি ছিল। গত বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল চারটার মধ্যে গরম সহ্য করতে না পেরে ১ হাজার ৭০০ মুরগি মারা গেছে। ওই সময় বিদ্যুৎ ছিল না।
Comment here