নিজস্ব প্রতিবেদক : সত্যিকারের মুক্তির জন্য পরনির্ভরতা ভুলে নারীদের যোগ্য ও দক্ষ হয়ে উঠতে হবে বলে মনে করেন ইউনিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহা. নূর আলী। তিনি বলেন, অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকলে নিজের যেমন আত্মমর্যাদা থাকে না, তেমনি সংসার ও সমাজেরও উন্নতি হয় না। সুতরাং নারীর মুক্তির পথ হচ্ছে শিক্ষিত হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে নিজের কর্মদক্ষতা দেখিয়ে দেওয়া।
অন্যদিকে ইউনিক গ্রুপের চেয়ারম্যান সেলিনা আলীর মতে, নারী-পুরুষের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, লিঙ্গবৈষম্য পরিহার ও নারীদের পরনির্ভরতা কমাতে পারলেই সমাজে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার ইউনিক গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। ইউনিক গ্রুপের অর্ধশতাধিক নারীকর্মীর সম্মানে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গ্রুপের চেয়ারম্যান সেলিনা আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. নূর আলী, দৈনিক আমাদের সময়ের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ গোলাম সারওয়ার এবং ইউনিক গ্রুপের ঊর্ধŸতন কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে কেক কেটে নারী দিবসের সাফল্য কামনা করেন অতিথিরা।
নূর আলী বলেন, ‘একজন শিক্ষিত নারী চাকরির পাশাপাশি তার বাসার সমস্ত কাজই করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে তারা পুরুষের
চেয়ে বেশি পরিশ্রম করেন। কিন্তু সামাজিক কিছু পুরনো ধ্যান-ধারণার কারণে তারা পরিশ্রমের স্বীকৃতি পান না। সমাজ মনে করে, নারী যতই বাইরে চাকরি-বাকরি করুক না কেন, বাসার কাজও তাদের করতে হবে। নারীবিদ্বেষী এই পুরনো ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নারীদের বাসার কাজে অবশ্যই যেন পুরুষরা সহযোগিতা করেন, সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।’
নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা ঘরে বন্দি না থেকে কাজে নেমে পড়–ন। নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিন। স্বামী কিংবা পরিবারের অন্যদের ওপর নির্ভরশীল না থেকে নিজেরা কিছু করুন। এতে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন হবে। নারীদেরও মর্যাদা বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, এক সময় আমাদের সমাজে নারীরা স্বামীর শত নির্যাতন সহ্য করেও সংসার টিকিয়ে রাখতেন। কারণ তারা স্বামীর ওপরই নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু যুগের পরিবর্তন হচ্ছে, নারীরা শিক্ষিত হচ্ছেন; স্বাবলম্বী হচ্ছেন। নারীদের শিক্ষার হার বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে হবে। তা হলেই নারীদের সত্যিকারের মুক্তি মিলবে। নারী দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করায় ইউনিক গ্রুপের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান নূর আলী।
ইউনিক গ্রুপের চেয়ারম্যান সেলিনা আলী বলেন, নারী-পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। তা হলে পরিবার কিংবা কর্মস্থল সবখানে নারীরা তাদের অধিকার পাবেন। নারীদের প্রতি পুরুষদের শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। নারীরা নানা ধরনের হয়রানি ও বৈষম্যের শিকার হবেন। আবার পুরুষদের প্রতিও নারীদের সম্মান দেখাতে হবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা-সম্মানের মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষ দেশটাকে এগিয়ে নিতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবার থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত জেন্ডার বৈষম্য দেখা যায়। নারী-পুরুষের সমতার জন্য অবশ্যই এই বৈষম্য দূর করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সমাজে অনেক নারী স্বামী কিংবা ভাইয়ের ওপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল থাকেন। ফলে তারা সংসারে স্বাধীনভাবে মতামত রাখতে পারেন না। এটা নারীমুক্তির পথে বাধা। এ বাধা দূর করতে হবে। নারীদের সাহস নিয়ে শিক্ষা-দীক্ষা ও চাকরি-বাকরিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তা হলে নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে। মনে রাখতে হবে, নারীরা অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি পেলেই তাদের সত্যিকারের মুক্তি মিলবে।’
দৈনিক আমাদের সময়ের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ গোলাম সারওয়ার বলেন, পরিবার ও সমাজে অবদান রাখলেও কুসংস্কারের কারণে একজন কর্মজীবী নারী প্রাপ্য সম্মানটুকু ঠিকমতো পান না। অথচ পৃথিবীকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে নারীর অবদান সবচেয়ে বেশি। এই সত্যটুকু সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু বছরে একবার নারী দিবস পালন করলেই হবে না, প্রতিদিনই নারীদের সম্মান জানাতে হবে; স্বীকৃতি দিতে হবে তাদের কাজের। তাদের কর্মস্থলকে বাসার মতোই নিরাপদ করতে হবে। প্রত্যেক কন্যাশিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব ধরনের সহিংসতা থেকে নারীকে রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। এ দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্র ও সরকারের পাশাপাশি প্রতিটি সচেতন মানুষকেই।
Comment here