আলোচনায় রওশনের ‘অভিমানী বক্তব্য’ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

আলোচনায় রওশনের ‘অভিমানী বক্তব্য’

মুহম্মদ আকবর : প্রায় ৬ মাস থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিয়ে সম্প্রতি দেশে ফেরেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। দেশে ফিরে তিনি রাজধানীর একটি হোটেলে মতবিনিময়সভায় দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি অভিমান প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বলেন, অসুস্থতার সময় দলের নেতাদের কেউ তার খবর নেননি। এইচএম এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টি এলোমেলো হয়ে পড়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।

তার এ বক্তব্য নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে বেশ আলোচনা চলছে। এ নিয়ে রওশন ও দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের অনুসারীদের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াইও চলছে। তবে জিএম কাদেরের দাবি, রওশন এরশাদ এমন বক্তব্য দেননি।

রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলের ২ জুলাইয়ের ওই মতবিনিময়সভার বিষয়ে হাতেগোনা কয়েকটি গণমাধ্যমকে জানানো হয়। জানানো হয়নি জিএম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদেরও।

সভায় রওশন এরশাদ বলেন, ‘আমি ছয় মাস থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। পার্টির কেউ খোঁজ নেয়নি আমার। আমি সবার খোঁজ নিয়েছি। যাদের দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, তারাই আমার নিয়মিত খোঁজ রেখেছেন। মসজিদ, মাজারসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে দোয়া প্রার্থনা করেছেন। আজ পল্লীবন্ধু এরশাদ নেই। তিনি থাকলে পার্টি অন্যরকম হতো। তিনি নেই, তাই জাতীয় পার্টি আজ এলোমেলো হয়ে গেছে।’

রওশন এরশাদের এমন ‘অভিমানী বক্তব্যের’ প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জিএম কাদের আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমার জানা মতে তিনি এমন মন্তব্য করেননি। তিনি আগামী দিনে দলগতভাবে জাতীয় পার্টির করণীয় বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।’

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘বেগম রওশন এরশাদ অত্যন্ত বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ একজন রাজনীতিবিদ। তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানানোর জ্ঞান আমার নেই। এতটুকু বলতে পারি জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ। জাতীয় পার্টিকে সারাদেশে শক্তিশালী করার জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।’

মতবিনিময়সভায় উপস্থিত এক নেতা জানান, রওশন এরশাদ প্রায় ৩০ মিনিট বক্তব্য দেন। শুরুতে তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সবার দোয়ায় তিনি বেঁচে আছেন- এমন বক্তব্য দিয়ে শেষ দিকে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে দলের কোনো নেতার নাম উল্লেখ করে কারও নিন্দা তিনি করেননি। পুনরায় চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবেন, এমন তথ্য দিয়ে সবার দোয়া চেয়ে নিজের বক্তব্য শেষ করেন তিনি।

জাতীয় পার্টির এক নেতা অনুষ্ঠানের আংশিক ভিডিও করেন, যা আমাদের সময়ের কাছেও এসেছে। সেখানে রওশন এরশাদকে প্রাণবন্ত দেখা যায়। দেশে ফিরে এত নেতাকর্মীর দেখা পেয়ে মন ভালো হয়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরে আমি আসার দিন এত মানুষ আমাকে যে অভ্যর্থনা জানিয়েছে, তা দেখে আমার দুচোখে জল এসে গেছে।’ তবে প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং বলেন, ‘তিনি বেঁচে থাকলে দলটি এমন থাকত না। আরও ভালো পর্যায়ে যেত।’

তিনি বলেন, যাদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। যারা চলে গেছে, তাদেরও ফিরিয়ে আনতে হবে। নতুবা আমরা অনেক পিছিয়ে যাব। নতুন প্রজন্মকে দলে আনতে হবে। দলকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমকক্ষ বানাতে হবে। নতুবা রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারব না। তিনি বলেন, পার্টি শক্তিশালী করার প্রয়োজনে যা যা করা দরকার, তা-ই করব। এরশাদ তিলে তিলে এই দলটা গড়েছেন। সকলকে নিয়েই কাজ করতে হবে।

সভায় জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমাদের আজ খুব দুঃসময় চলছে। আপনি (রওশন) যখন অসুস্থ, তখন আপনার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল করলে আমাকে বাধা দেওয়া হয়, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। আপনি যখন সংকটাপন্ন অবস্থায় থাইল্যান্ড যান, তার পরের দিন তারা কক্সবাজারে দলবেঁধে আমোদ-ফুর্তি করেছে। রওশন এরশাদের জীবদ্দশায় তার ছেলে সাদ এরশাদকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান করার দাবি জানান মামুন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম মিলন, দেলোয়ার হোসেন খান, জিয়াউল হক মৃধা, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজু প্রমুখ।

 

Comment here