আসল কারখানা নকল সিগারেটের - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

আসল কারখানা নকল সিগারেটের

টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার কামাতি এলাকায় একটি নকল সিগারেট কারখানার সন্ধান পেয়েছে ঢাকা পশ্চিম কর কর্তৃপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টাঙ্গাইল শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ‘মেসার্স শাকিল অটো রাইস মিল’ নামের এই কারখানায় অভিযান চালানো হয়।

ঢাকা পশ্চিম কর কমিশনার ড. মইনুল ইসলাম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘কারখানাটি বাইরে অটো রাইস মিলের সাইনবোর্ড টাঙানো ছিল। কিন্তু ভেতরে সিগারেট উৎপাদনের মেশিনারি পাওয়া যায়। অভিযানকালে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর “গোল্ড লিফ” ব্রান্ডের প্যাকেট পাওয়া গেছে। এগুলো যাচাই করে দেখা যায় এসব সিগারেট নকল। এ ছাড়া সেখানে বিপুল পরিমাণ উন্নতমানের সিগারেট ফিল্টার উদ্ধার করা হয়।’

মইনুল ইসলাম খান বলেন, ‘অভিযানে দুই ভ্যান সমান তিন টন সিগারেটের তামাক জব্দ করা হয়েছে। এসব তামাক প্রক্রিয়াজাতকৃত এবং সিগারেটে ব্যবহারের উপযোগী। এ ছাড়া কারখানায় স্থাপিত উন্নতমানের দুই সেট মেশিনও জব্দ করা হয়েছে।

এই কর কর্মকর্তা বলেন, ‘এ অভিযানের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি এক বছরের অধিক সময় ধরে এই অবৈধভাবে নকল সিগারেট প্রস্তুত করে আসছিল। এসব সিগারেটের মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর ব্র্যান্ডই বেশি। এই কারখানার জন্য কোনো ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া হয়নি। ভ্যাটের নিবন্ধন ব্যতিত এর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে, যা অবৈধ। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ ভ্যাট রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে ক্রেতারা নকল সিগারেট কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে ক্রেতার স্বাস্থ্যঝুঁকিও সৃষ্টি হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে কতিপয় অসাধু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি অন্য ব্যবসার আড়ালে অবৈধভাবে সিগারেট উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। ফলে ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নানামুখী ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়ছে। আজকের অভিযানে এই অভিযোগের সত্যতা মিলল। দেশের অন্যান্য এলাকাতেও আরও বেশ কিছু গোপন সিগারেটের কারখানা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিগগিরই এদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযানের সময় ওই কারখানায় উপস্থিত নিরাপত্তাপ্রহরী শফিকুল ইসলামকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মইনুল ইসলাম খান বলেন, ‘কারখানার জায়গার মালিক স্থানীয় শাহ আলম। তবে করিম টোবাকোর কেউ এটি পরিচালনা করেন। ফ্যাক্টরি থেকে কুষ্টিয়ার করিম টোবাকোর কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেছে। অভিযানের খবর পেয়ে মালিকপক্ষ ও তাদের সহযোগীরাও আগেই পালিয়ে যায়। তবে প্রাপ্ত আলামত ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কারখানায় স্থাপিত উন্নত মানের মেশিন দিয়ে দৈনিক প্রায় ২০ লক্ষ শলাকা সিগারেট প্রস্তুত করা সম্ভব। সে হিসেবে এ ধরনের একটি গোপন প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ স্তরের সিগারেট উৎপাদনের ভিত্তিতে মাসে গড়ে প্রায় ৫১ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি হতে পারে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরও অনুসন্ধানের পর অন্যান্য আইনেও মামলা করা হবে।’

২০ সদস্য বিশিষ্ট কর কর্মকর্তাদের এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপকমিশনার আবদুস সাদেক। এতে টাঙ্গাইল জেলার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) একটি দর সহায়তা করে।

প্রসঙ্গত, সিগারেট থেকে আহরিত ভ্যাট মোট ভ্যাট রাজস্বের প্রায় এক চতুর্থাংশ। আর এনবিআরের অংশ প্রায় এক দশমাংশ। সিগারেট খাতে মোট ভ্যাটের পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।

Comment here