এক লাইনে বিপরীতমুখী দুই ট্রেন, চালকের দক্ষতায় রক্ষা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
রাজশাহীসমগ্র বাংলা

এক লাইনে বিপরীতমুখী দুই ট্রেন, চালকের দক্ষতায় রক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় যাত্রীবাহী দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও একই ঘটনা ঘটতে চলেছিল রাজশাহীর আড়ানীতে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে একই লাইনে উঠে যায় বিপরীতমুখী দুটি আন্তঃনগর ট্রেন। তবে চালকের দক্ষতায় মাত্র ৩০ ফুট দূরত্বে থাকতেই থেমে যায় ট্রেন দুটি। এতে অল্পের জন্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান দুই ট্রেনের যাত্রীরা।

ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে ওই স্টেশনের মাস্টার ও পয়েন্টম্যানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। অন্যদিকে বগি লাইনচ্যুত হওয়ার দুই সপ্তারের মাথায় সিরাজগঞ্জে এবার ট্রেনের ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটেছে। এতে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। এর আগে গত ১৪ নভেম্বর ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলপথের সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলস্টেশন এলাকায় রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ সময় ট্রেনের ইঞ্জিনসহ তিনটি বগিতে আগুন ধরে যায়। এতে কোনো প্রাণহানি না হলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

জানা যায়, আন্তঃনগর ট্রেন উত্তরা এক্সপ্রেস রাজশাহী রেলস্টেশন থেকে পার্বতীপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছিল। আর খুলনা থেকে ছেড়ে আসা কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস রাজশাহী ঢুকছিল। আড়ানী রেলস্টেশনের অদূরে উত্তরা এক্সপ্রেস ও কপোতাক্ষ এক্সপ্রেসের ক্রসিং হওয়ার কথা ছিল। রাজশাহী প্রান্তে আব্দুলপুর অভিমুখী উত্তরা এক্সপ্রেস ক্রসিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। এ সময় খুলনা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনটি একই লাইনের মধ্যে ঢুকে পড়ে। লাইনের ওপর ট্রেন দেখে ব্রেক করেন কপোতাক্ষ এক্সপ্রেসের লোকোমাস্টার (চালক)। ট্রেনটি মুখোমুখি আসার পর থামাতে সক্ষম হোন তিনি। এ সময় দুই ট্রেনের দূরত্ব ছিল মাত্র ৩০ ফুট। এ ঘটনার পর কপোতাক্ষ এক্সপ্রেসের যাত্রীরা নেমে আসেন। পরে চারদিকে হইচই পড়ে যায়। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান এ দুই ট্রেনের প্রায় এক হাজার যাত্রী।

এদিকে ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে রাজশাহী আড়ানী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার একরামুল হক ও পয়েন্টম্যান রওশন আলীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে।

এ সম্পর্কে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের (পাকশী) বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টম্যানের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটতে চলেছিল। আড়ানী রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে এ দুটি ট্রেনের ক্রসিংয়ের কথা ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্রসিংয়ের জন্য আড়ানী রেলওয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করছিল সিক্সডাউন ট্রেন উত্তরা এক্সপ্রেস। এ সময় লাইনটির পয়েন্ট পরিবর্তন করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিলো পি. ম্যান রওশন আলীর। কিন্তু তিনি লাইনটি পরিবর্তন করেননি। যে কারণে বিপরীত দিক থেকে রাজশাহী অভিমুখে আসা আন্তঃনগর ট্রেন কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস একই লাইনে ঢুকে পড়ে। তবে চালকের দক্ষতার কারণে ট্রেনটি উত্তরা এক্সপ্রেসের সামনাসামনি গিয়ে শেষ পর্যন্ত থামাতে সক্ষম হয়। ফলে অল্পের জন্য মুখোমুখি সংঘর্ষের হাত থেকে রক্ষা পায় উত্তরা ও কপোতাক্ষ।

এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী লোকাল ট্রেন রাজশাহী এক্সপ্রেস কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল এলাকায় পৌঁছলে ট্রেনের ইঞ্জিনের পানির পাইপের ত্রুটি দেখা দেয়। এতে ইঞ্জিনটি বিকল হয়ে যায়। পরে জামতৈল স্টেশন থেকে আটকেপড়া বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন এসে বিকল হওয়া ট্রেনটির ইঞ্জিন ও বগি উদ্ধার করে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশনে রেখে আসার পর এই রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। ইঞ্জিন বিকল হওয়ার কারণে ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।

 

Comment here