বাসায় থেকে তুবা দুষ্টুমি করবে, স্কুলে ভর্তি করলে শান্ত থাকবে’- গত ২০ জুলাই এ কথা বলেই ঘর থেকে বের হয়েছিলেন তাসলিমা বেগম রেনু। চার বছরের মেয়েকে ভর্তি করানোর জন্য বাড্ডা প্রাইমারি স্কুলে খোঁজখবর নিতে যান; কিন্তু তাকে এ সুযোগ দেয়নি কিছু উচ্ছৃঙ্খল জনতা, গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। তাদের সন্দেহ ছিল- ওই নারী ছেলেধরা।
এর পরই দেশব্যাপী শুরু হয় তোলপাড়। রেনুকে নির্মমভাবে যারা হত্যা করেছে, তাদের দ্রুতবিচার আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে গতকাল শুক্রবার মানববন্ধন করেন নিহতের স্বজনরা। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে ছিল রেনুর ছোট্ট মেয়ে তুবাও। এতক্ষণে সে বুঝে গেছে তার মা নেই, আর কখনো ফিরে আসবে না তার কাছে। একপর্যায়ে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে মাহারা এ শিশুর কান্নায়। ছোট্ট তুবার মুখে কেবল একটাই আবদারÑ ‘আমার মাকে এনে দাও’; কিন্তু কেউ কি পারবে তার এ দাবি পূরণ করতে? তাই নিশ্চুপ হয়ে যান উপস্থিত সবাই। অনেকেই তখন তুবাকে কোলে তুলে ভালোবাসা বিলান। তবে পৃথিবীর কোনো সান্ত¡নাই যেন শান্ত করতে পারছে না তাকে।
মানববন্ধনে বলা হয়, রেনু হত্যায় জড়িত সবার সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যেন আড়ালে থেকে রেহাই না পায়। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিলে ভবিষ্যতে আর কাউকে এমন নির্মমভাবে প্রাণ হারাতে হবে না। রেনুর বড় বোন নাজমুন নাহার নাজমা ও ভাগ্নে সৈয়দ নাছির উদ্দিন টিটু বলেন, এ হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এখন সময়ের দাবি। আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে বিচার না করলে রেনুর মতো আগামীতে অন্য কেউ এ রকম মর্মান্তিক হত্যার শিকার হতে পারে।
আসামি হৃদয় ও প্রচারণাকারী রিয়ার দোষ স্বীকার : রেনু বেগমকে পিটিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি হৃদয় ওরফে ইব্রাহিম এবং প্রচারণাকারী রিনা খাতুন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মাদ মিল্লাত হোসেন তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন এবং পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর মধ্যে গত ২৪ জুলাই আদালত হৃদয়ের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় হৃদয় দোষ স্বীকার করতে রাজি হয়। এ ছাড়া গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই রিনা খাতুন দোষ স্বীকার করতে রাজি হওয়ায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার ইন্সপেক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক তাদের জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আদালতে হাজির করেন।
এ মামলায় জাফর হোসেন নামে আরেক অভিযুক্ত গত ২২ জুলাই দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। জাফর বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া মুরাদ মিয়া, সোহেল রানা, মো. বিল্লাল, আসাদুল ইসলাম, মো. রাজু, মো. শাহীন, বাচ্চু মিয়া, মো. বাপ্পি, কামাল হোসেন ও আবুল কালাম আজাদ নামে ১০ আসামি রিমান্ডে রয়েছেন।
Comment here