কঠোর সমালোচনা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

কঠোর সমালোচনা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

ইউসুফ আরেফিন : করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ভূমিকার ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। কোভিড ১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সাত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সভা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এতে করোনা মোকাবিলায় সরকারের কার্যক্রম পর্যালোচনা ও পরবর্তী করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কনফারেন্সে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যুক্ত হন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবও সভায় যুক্ত ছিলেন। গত রবিবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল অনুবিভাগ) সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে গতকালের সভাটি আহ্বান করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এবং এসব মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানানো হয়।

বৈঠকসূত্র জানায়, সভায় কয়েক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কঠোর সমালোচনা করেন। তারা বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতির এত অবনতির জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবই দায়ী। শুরু থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে এত মানুষ আক্রান্ত হতো না; কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব বক্তব্যের বিরোধিতা করে করোনায় ইউরোপ-আমেরিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

সূত্র জানায়, এক মন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেনÑ সঠিক সময়ে হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্তসংখ্যক পিপিই সরবরাহ করা হয়নি। যেসব হাসপাতালে পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে, সেগুলো নিম্নমানের এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নকল। এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশি হয়েছে। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বার বার সাফাই গেয়ে যাচ্ছে।

এর আগে গত সোমবার ভিডিও কনফারেন্সে বিভিন্ন জেলার সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এন ৯৫-এর নামে সাধারণ মাস্ক সরবরাহের সমালোচনা করেন। তিনি সংশ্লিষ্টদের ভালোভাবে খতিয়ে দেখে সরবরাহের নির্দেশ দেন।

গতকালের সভায় এক মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনায় আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। পর্যাপ্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্তদের চিহ্নিত করে আলাদা করতে হবে। মে মাসের শেষনাগাদ কয়েক লাখের মতো হতে পারে বলেও আশঙ্কার কথা জানান ওই মন্ত্রী। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আক্রান্ত এত বেশি হবে না। সভায় করোনা বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রচার নিয়েও আলোচনা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সঠিক উপায়ে প্রচার চালিয়ে মানুষকে সচেতন করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন কেউ কেউ।

সূত্র জানায়, পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ বলেন, সারাদেশে লকডাউন বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। যেসব এলাকায় বেশি আক্রান্ত শুধু সেসব এলাকায় লকডাউন বাড়াতে হবে। সারাদেশে লকডাউন কার্যকর করার মতো পুলিশের পর্যাপ্ত জনবল নেই। এ সময় বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, এখনই লকডাউন উঠানো যাবে না। কমপক্ষে আরও এক সপ্তাহ বাড়াতে হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জানা গেছে, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব করে সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য তার দপ্তরে পাঠানো হচ্ছে। সাধারণ ছুটি এক সপ্তাহ বাড়ালে ১ ও ২ মে সাপ্তাহিক ছুটি শেষে ৩ মে থেকে অফিস-আদালত চালু হবে।

বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আলী আজম আমাদের সময়কে বলেন, করোনা মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত কাজগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কী উপায়ে এ দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে কথা হয়েছে। গার্মেন্টস খোলার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি।

Comment here