করোনা হাসপাতালের সামনে পশুর হাট - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

করোনা হাসপাতালের সামনে পশুর হাট

সানাউল হক সানী : রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকার রেলওয়ে কলোনির একটি মাঠের আশপাশের এলাকায় পশুর হাটের দরপত্র আহ্বান করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শাহজাহানপুর এলাকাকে করোনার রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ওই কলোনিতেও বেশ কয়েক করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছেন; কিন্তু এই এলাকাতেই কোরবানির পশুর হাট বসানোর আয়োজন করেছে ডিএসসিসি। বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে ইতোমধ্যে মানববন্ধন করেছেন কলোনির বাসিন্দারা। একই অবস্থা পুরান ঢাকার নয়াবাজারে ঢাকা মহানগর হাসপাতালের সামনের এলাকায়। এই হাসপাতালটি করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে; কিন্তু ওই হাসপাতালের সামনের রাস্তায় কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর দরপত্র আহ্বান করেছে ডিএসসিসি।

ডিএসসিসির দেওয়া দরপত্রে উল্লেখ করা হয়Ñ উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার মৈত্রী সংঘ মাঠের আশপাশের এলাকায় পশুর হাট বসানো হবে। হাটের ইজারামূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫৫ টাকা।

শাহজাহানপুরের যে স্থানে করপোরেশন হাট বসানোর ঘোষণা দিয়েছে, স্থানটিতে রেলওয়ে কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা বসবাস করেন। স্থানীয়দের কাছে এটি শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি হিসেবে পরিচিত। কলোনিতে বর্তমানে এক হাজার ৮৯২টি কোয়ার্টার রয়েছে।

এদিকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে তারা হাট না বসানোর দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। আবাসিক এলাকার ভেতর যেন হাট না বসানো হয়Ñ এজন্য তারা বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেছেন।

কলোনির বাসিন্দারা বলছেন, বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারী করোনা বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করছে। তা ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শাহজাহানপুর এলাকাকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে। এমন বাস্তবতায় গরুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। গরুর হাটে জনসমাগম বৃদ্ধির কারণে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

কলোনির বাসিন্দা বিজন সরকার বলেন, আমরা গত বছর প্রতিবাদ করেছিলাম গরুর হাট না বসানোর জন্য; কিন্তু প্রভাবশালী মহল এতে কর্ণপাত করেনি। করোনা ভাইরাসের এমন দুর্যোগ মুহূর্তে আমাদের কলোনির কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছেন। পুরো এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরও এখানে হাট বসানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক।

স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, আবাসিক এলাকার ভেতর যেন পশুরহাট না বসানো হয়, এজন্য গত বছরও কলোনির বাসিন্দারা সোচ্চার ছিলেন; কিন্তু প্রভাবশালী একটি মহলের চাপে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছেন।

মৈত্রী সংঘের মাঠটি ডিএসসিসির ১১ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মির্জা আসলাম আসিফ বলেন, ব্যবস্থা করা কঠিন হবে কলোনি এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ। এখানে হাট বসালে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সমাগম ঘটবে। সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে। এলাকার বাসিন্দারা এমন দাবি করছেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ১৫ দিন আগের হিসাব মতে তার ওয়ার্ডে করোনা রোগীর সংখ্যা ৬৫ জন। যেহেতু এই এলাকাটি রেড জোনের মধ্যে পড়েছে। এজন্য এবার কলোনির বাসিন্দাদের উদ্বেগ অনেকটাই বেশি। তারা আবাসিক এলাকার ভেতর হাট বসানোর বিপক্ষে।

গোটা পৃথিবী করোনা মহামারীর কারণে একটা সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে আছে উল্লেখ করে এই জনপ্রতিনিধি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, এবার কলোনির ভেতরে পশুরহাট না বসালে ভালো হবে।

এদিকে ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালে চলছে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা। হাসপাতালসংলগ্ন আরমানিটোলা মাঠ। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে আরমানিটোলা মাঠের আশপাশের খালি জায়গায় কোরবানির পশুর হাটের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ডিএসসিসি; কিন্তু বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্যবিধির কিছুই বলা হয়নি। যদিও গত ৩০ এপ্রিল থেকে ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

পরে ওই হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীদের পাশের মিটফোর্ড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এর পর থেকে মহানগর জেনারেল হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালটি ডিএসসিসির নিয়ন্ত্রণাধীন। চিকিৎসাসেবা ও শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এবং করোনা প্রতিরোধে এই পশুহাট বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ডিএসসিসি এলাকায় পশুর হাটগুলো বসানোর বিষয়টির তদারকি করছে সংস্থাটির সম্পত্তি বিভাগ। জানতে চাইলে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, ওই এলাকায় যাতে পশুরহাট না বসেÑ এ সংক্রান্ত একটা চিঠি তারা রেল মন্ত্রণালয় থেকে পেয়েছেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবেন।

মহানগর জেনারেল হাসপাতালের বিষয়ে তিনি বলেন, হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

Comment here