কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যা, পুলিশ কনস্টেবল প্রেমিকের শাস্তির দাবি পরিবারের - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যা, পুলিশ কনস্টেবল প্রেমিকের শাস্তির দাবি পরিবারের

কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি : নেত্রকোণার কেন্দুয়া সরকারি কলেজের জুঁই আক্তার তৃষ্ণা নামে এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে আজ বৃহস্পতিবার মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে, গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে জুঁই উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের গাড়াদিয়াকান্দা গ্রামের নিজ ঘরে গলায় মায়ের শাড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।

খবর পেয়ে রাতেই কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুজ্জামান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।

এ বিষয়ে জুঁইয়ের বাবা রতন আহম্মেদ কেন্দুয়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন।

আজ জুঁইয়ের মা আসমা আক্তার ও পরিবারের সদস্যরা জানান, গত সাত বছর ধরে পার্শ্ববর্তী আউদাটি গ্রামের আবুল কালামের ছেলে পুলিশ কনস্টেবল সাইফুল্লাহ তারেকের সঙ্গে জুঁইয়ের প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল।

আসমা আক্তার বলেন, ‘গত বছর ঈদুল আজহার পরদিন প্রেমিক তারেক ছুটিতে বাড়ি এসে জুঁইকে ফোন করে ঘুরতে নিয়ে যান। পরে মাঝপথে প্রেমিকাকে রেখে চলে যান তারেক। উপায়ন্তর না দেখে জুঁই তার প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে উঠলে প্রেমিকের পরিবারের লোকেরা তাকে মানসিক নির্যাতন করে।’

তিনি বলেন, ‘পরে তারেকের মামা সৈয়দুজ্জামান স্বাপন জুঁইকে তার বাড়ি নিয়ে গেলে সেখানেও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। পরে আমাদের খবর দেন এবং আমরা গিয়ে বুঝিয়ে জুঁইকে বাড়িতে নিয়ে আসি। সেই থেকে জুঁই অপমান বোধ করে একা থাকা শুরু করে এবং কারও সঙ্গে তেমন কথাবার্তা বলতো না।’

মা আসমা আক্তার আরও বলেন, ‘গত ২-৩ মাস ধরে ওই ছেলে (তারেক) আমার মেয়ের সঙ্গে আবার ফোনে সম্পর্ক করে। ঘটনার দিন বুধবার আমি সান্দিকোনা বাগানবাড়ি যাই। আমার স্বামী যান জনতার বাজারে। সান্দিকোনা থেকে সন্ধ্যায় এসে দেখি ঘরের দরজা জানালা বন্ধ। মেয়েকে ডেকে সাড়া শব্দ না পেয়ে জানালা খুলে দেখি ঘরের ধর্ণার সঙ্গে আমার মেয়ে ঝুলছে ।’

তিনি তারেককে দায়ী করে বলেন, ‘তারেকের জন্য আমার মেয়ে মরেছে। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

জুঁইয়ের চাচাতো বোন মিলি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রেম ছিল তারেক-জুঁইয়ের মধ্যে। দুই বছর পূর্বে তারেকের পুলিশে চাকরি হওয়ার পর থেকেই সে বদলে যায়। জুঁই আত্মহত্যার আগে তার খাতার ওপর লিখে রেখে যায়- “যার কারণে ছাড়লাম জগত সংসার”। (টি.জে) অর্থাৎ তারেক + জুঁই।

তারেকের মামা সৈয়দুজ্জামান স্বপন বলেন, মেয়েটির সঙ্গে তারেকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বর্তমানে নেই। এক বছর আগে মেয়েটি ছেলের বাড়িতে গিয়ে উঠলে আমি আমার বাড়িতে এনে তাদের পরিবারের হাতে মেয়েটিকে বুঝিয়ে দিই। তার ওপর কোনো নির্যাতন করা হয়নি।

এ ব্যাপারে প্রেমিক সাইফুল্লাহ তারেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেনন, ‘জুঁইয়ের সঙ্গে আমার আগে সম্পর্ক থাকলেও ২-৩ বছর ধরে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। গত ২০১৮ সালে চাকরি হওয়ার পর থেকে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তার মৃত্যু সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।’

এ নিষয়ে কেন্দুয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) মাহমুদুল হাসান এবং ওসি রাশেদুজ্জামান বলেন, প্রেম সংক্রান্ত বিষয়টি মেয়ের পরিবার দাবি করছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মরদেহ নেত্রকোণা মর্গে পাঠানো্ হয়েছে এবং বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে জুঁইয়ের বাবা বাদী হয়ে কেন্দুয়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন।’

Comment here