খালেদা জিয়া দিয়েছেন অস্ত্র আমি দিয়েছি খাতা-কলম - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
জাতীয়

খালেদা জিয়া দিয়েছেন অস্ত্র আমি দিয়েছি খাতা-কলম

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী দিনের নেতৃত্ব বেরিয়ে আসতে ছাত্রলীগকে নীতি-আদর্শে গড়ে তুলতে আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়া ছাত্রদের অস্ত্র দিয়েছিলেন, আমি দিয়েছি খাতা-কলম। গতকাল শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে পায়রা উড়িয়ে, পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী। এ সময় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সারাদেশের বর্তমান ও সাবেক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। তবে অনুষ্ঠানে নানা বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ছিলেন না। তাদের অনুষ্ঠানে দাওয়াতও দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময়ও তাদের নাম বলেননি।

দুই দিনব্যাপী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে রবিবার পালিত হবে রক্তদান কর্মসূচি। এর পর শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষ হবে।

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারমুক্ত করে পূর্ণ দায়িত্বের ঘোষণা দেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একটি প্রস্তাব রেখেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ থেকে ছাত্রলীগকে ভারমুক্ত করে দিলাম। আজ থেকে আর ভার থাকবে না। আজকের দিন থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত নয়।

এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ভারমুক্ত করার বিষয়ে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী এখন বক্তব্য দেবেন। তার বক্তব্যের আগে বলতে চাই, আমাদের ছাত্রলীগ ভারপ্রাপ্ত। ভারপ্রাপ্ত কথাটি কেমন যেন শোনায়। তাই আমি ছাত্রলীগকে ভারমুক্ত করার জন্য আমাদের নেত্রীর কাছে অনুরোধ জানাই।

উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সংগঠনের ১ নম্বর সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিতর্কিত কর্মকা-ের জন্য ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে জয় ও লেখককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, আদর্শ ও নীতি ছাড়া কোনোদিন নেতৃত্ব তৈরি হয় না। নীতি ছাড়া কেউ কোনোদিন মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে না। জাতিকে কিছু দিতে পারে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের জন্য অবদান রাখতে পেরেছিলেন। কারণ তার মধ্যে নীতি ও আদর্শ ছিল। তিনি বলেন, একটা নীতি নিয়ে, আদর্শ নিয়ে ছাত্রলীগকে পরিচালিত হতে হবে। এর মাধ্যমেই আগামীতে দেশ পরিচালনায় যোগ্য নেতৃত্ব পাওয়া যাবে। আগামী দিনের নেতৃত্ব যেন প্রজন্মের পর প্রজন্মের একটি ধারাবাহিকতায় আসে। এ নেতৃত্ব যেন ছাত্রলীগের মধ্য দিয়ে তৈরি হয় সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিতে হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল উল্লেখ করে বাঙালি জাতির ইতিহাসে ছাত্রলীগের নানা অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ নানা সংগ্রামে ছাত্রলীগের অবদানকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেদিক থেকে ভাবতে গেলে ছাত্রলীগই মুরব্বি সংগঠন। তিনি বলেন, সারাদেশে একটা সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের যে ঐতিহ্য ও অবদান সেটি প্রতিটি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর মনে রাখা উচিত। সেটি মনে রেখেই ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে তাদের আচরণ, কথাবার্তা ও রাজনীতি সেভাবেই করা উচিত, যাতে এ সংগঠন একটা মর্যাদাপূর্ণ হয় এবং দেশ ও জাতির কাছে আস্থা অর্জন করে চলতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানিদের একটা প্রবণতা ছিল, আমাদের সব কিছু কেড়ে নেওয়ার। তারা শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলতে বাধা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা ফরমান জারি করেছিল যে, বাংলা অক্ষর পরিবর্তন করে আরবি হরফে বাংলা ভাষা লিখতে হবে। এর বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম ছিল তা ছাত্রলীগকে দিয়েই শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। এর পর যে সংগ্রাম হয়েছে সেখানে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

তিনি বলেন, ১৯৫৮ সালে যখন মার্শাল ল দেওয়া হলো তখন বঙ্গবন্ধু কারাগারে থেকেই সিদ্ধান্ত নিলেন, যেভাবেই হোক এই বাংলাকে মুক্ত করতে হবে, স্বাধীন করতে হবে। ১৯৬০ সালে বঙ্গবন্ধু যখন জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন তখন শুধু রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল তা নয়, তখন তার ঢাকার বাইরে যাওয়াও নিষিদ্ধ ছিল। তখন তিনি ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করার নির্দেশনা দিয়ে পদক্ষেপ নেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সেই লক্ষ্যে তিনি পুরো বাংলাদেশে ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করেন। প্রত্যেক জেলা এবং ইউনিয়নে দু-তিন সদস্যবিশিষ্ট একটা নিউক্লিয়াস গঠন করে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ১৯৬৬ সালে ছয়দফা ঘোষণা করে পুরো বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং ছাত্রলীগকে দিয়ে কাজ করিয়েছিলেন। জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে মানুষের মধ্যে চেতনা তৈরি করে জনগণকে সেটি গ্রহণ করানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন ছাত্রলীগকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের প্রথম প্রতিবাদ এই ছাত্রলীগের ছেলেরাই করেছিল। ছাত্র ইউনিয়নসহ আরও কিছু সংগঠন একসঙ্গে প্রতিবাদ করে। সেই সময় আমরা দুই বোন শরণার্থী হিসেবে বিদেশ ছিলাম, আমাদের দেশে ফিরে আসতে দেওয়ার দাবিও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে করা হয়। একই সঙ্গে যুবলীগও দাবি করে আর আওয়ামী লীগ থেকে মিজানুর রহমান চৌধুরী সাহেব সংসদে দাবি করেছিলেন। দেশের যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে ছাত্রলীগ সবসময় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

Comment here