গত বছর সড়কে প্রাণ গেছে ৫২২৭ জনের - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

গত বছর সড়কে প্রাণ গেছে ৫২২৭ জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০১৯ সালে প্রাণ হারিয়েছেন ৫ হাজার ২২৭ জন। এ সময় দেশে মোট ৪ হাজার ৭০২টি দুর্ঘটনা ঘটে। আর সারা দেশের মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, গত বছর ঢাকায় মোট ৩০৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। গত বছর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়েছে।

আজ শনিবার এসব তথ্য জানায় নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)। জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ মিলনায়তনে নিসচা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির ‘২০১৯ সালের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান’ এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ পড়েন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। এ সময় দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করা এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- ২০১৯ সালে রেলপথে ১৬২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৯৮ জন, আহত ৩৪৭ জন। নৌপথে ৩০টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৬৪ জন এবং আহত হয়েছে ১৫৭ জন আর নিখোঁজ ১১০ জন। তবে আকাশপথে গত বছর কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।

নিসচা জানায়, গত বছরের তুলনায় এবার সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। এতে বলা হয়, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ১ হাজার ৫৯৯টি বেশি হয়েছে। ২০১৯ সালে মোট মোট ৪ হাজার ৭০২টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৫ হাজার ২২৭ জন। ২০১৮ সালে ৩ হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৪ হাজার ৩৯ জন নিহত ও ৭ হাজার ৪২৫ জন আহত হয়েছিলেন। আর ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৩৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৬৪৫ জন নিহত ও ৭ হাজার ৯০৮ জন আহত হয়েছিলেন।

সড়ক দুর্ঘটনায় চালকদের মৃত্যুর বিষয়টিও নিসচার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সংগঠনটি জানায়, ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৯ জন বাসচালক ও সহকারী এবং ৭২ জন ট্রাকচালক ও সহকারী মারা গেছেন।

এতে জানানো হয়- ২ হাজার ৬৬১ জন পথচারী মারা গেছেন, যা মোট দুর্ঘটনার ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ। আর গত বছর বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বড় শহর ও মহাসড়কগুলোতে। অবৈধ যানবাহন- ভ্যান, রিকশা, নছিমন, অটোরিকশা এ জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।

আইনকে অমান্য করে ধীরগতির বাহন মহাসড়কে এখনো চলাচল করে, যা দূরপাল্লার বড় গাড়িগুলোর চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশকে এই ব্যাপারে তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে দেখা যায় না।

নিসচার প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ছে। ২০১৯ সালে মোট ১ হাজার ৯৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে।  সংখ্যা। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬৪৮ জন মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী।

জেলাভিত্তিক সড়ক দুর্ঘটনা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। ২০১৯ সালে ঢাকায় মোট ৩০৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, আর মারা গেছে ৩৩৫ জন। আর সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঝালকাঠিতে, এ জেলায় গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন প্রাণ হারান।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন করে আসছে। তারা এবার ১১টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, টিভি চ্যানেল ও অনলাইন গণমাধ্যমের তথ্য, নিসচার ১২০টি শাখা সংগঠনের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র পক্ষ থেকে আটটি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ট্রাফিক সিগন্যাল মানা, যত্রতত্র পার্কিং না করা, ওভারটেক বিষয়ে আইন প্রয়োগ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়গুলো স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা, মিডিয়ায় সচেতনতা কার্যক্রম বাড়ানো, দক্ষ চালক তৈরিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, মহাসড়ক ও প্রধান সড়ক চার লেনে উন্নীত করা, সড়কের ত্রুটি দূর করা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নিসচার মহাসচিব সৈয়দ এহসান-উল হক, উপদেষ্টা ও বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব লিটন এরশাদ প্রমুখ।

Comment here