চালের দাম বাড়ে বেশি, কমে কম - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

চালের দাম বাড়ে বেশি, কমে কম

রেজাউল রেজা : এবার আমনের ফলন ভালো হলেও চালের বাজারে হতাশা কমেনি সাধারণ ভোক্তাদের। বাজারে নতুন চাল ওঠার দেড় মাস পর সম্প্রতি মোটা চালের দাম কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা কমেছে, যেখানে এর আগে দাম বেড়েছিল ৪ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত। অপরদিকে বাজারে মাঝারি ও সরু চালের দাম আগের মতোই চড়া রয়েছে। ভোক্তাদের অভিযোগ, চালের দাম বাড়ার বেলায় দফায় দফায় বাড়ে, অথচ কমার বেলায় খুবই সামান্য কমে। এভাবেই বছর ঘুরে চালের পেছনে খরচ কেবল লাফিয়ে বাড়ছে। যা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে।

কারওয়ানবাজারে চাল কিনতে আসা দিনমজুর মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘দাম বাড়ার পর স্বর্ণা চাউলের কেজি ৫২-৫৪ টাকাতে কিনতে হইছে। ভাবলাম নতুন চাউল উঠলে দাম কইমা যাইবো। কিন্তু কমে নাই। উল্টা নতুন চাউলও বেশি দামে কিনতে হইছে। এতদিন বাদে এখন দাম কমছে মাত্র দুই টাকা। অথচ বাড়ার সময় বাড়ছিল ৪ টাকা-৬ টাকা।’

একই অভিযোগ বেসরকারি চাকরিজীবী মো. মীর নাসিরেরও। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা চালের যে দাম কমান তা অনেকটাই লোক দেখানো। দফায় দফায় ২ টাকা, ৪ টাকা করে দাম বাড়ানো হয়। দুই-তিন দফা দাম বাড়ানোর পর এক দফায় হয়তো ১-২ টাকা কমানো হয়। এভাবে চাল ব্যবসায়ীরা আড়ালে দাম বাড়িয়ে চলেছেন। আর দফায় দফায় প্রয়োজনীয় এ খাদ্যপণ্যের পেছনে আমাদের খরচ কেবল বেড়েই চলেছে।’

আরেকজন ক্রেতা মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘মোটা চাল আগে ৪৫ টাকাতেও কেনা গেছে। এখন সে চালের দাম ৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এখন মাত্র ১-২ টাকা কমে ৪৮-৪৯ টাকা হয়েছে। কমল আর কই। বাড়তিই তো রইল। যতটুকু বাড়ে তত কমলেও হয়। কিন্তু বাড়ে বেশি, কমে অনেক কম। খবরে শুনি- দেশে নাকি একের পর এক বাম্পার ফলন হচ্ছে। এই বাম্পার ফলনে কী লাভ, যদি বাজারে দাম না কমে।’

বাজারে সরবরাহ বাড়াতে সরকারের আমদানির সিদ্ধান্তের পর বাজারে আমদানিকৃত চালের সরবরাহ বেড়েছে। এরই মধ্যে বাজারে উঠেছে নতুন আমন চাল। তবু চালের বাজারে কাক্সিক্ষত স্বস্তি ফেরেনি। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলেও দেখা যায়, বছরজুড়ে দাম বাড়া ও কমার খেলায় দিনশেষে চালের দাম কেবল বেড়েছেই। সংস্থাটির সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে মোটা চালের দাম ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে মাঝারি ও সরু চালের দাম যথাক্রমে ৩ দশমিক ৭০ এবং ২ দশমিক ৩১ শতাংশ বেড়েছে।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে প্রকৃত মূল্যবৃদ্ধির হার আরও বেশি। গত বছর একই সময়ে যে মাঝারি চাল ৫৫ টাকায় কেনা গেছে, এখন তা কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকায়। এলাকাভেদে ৬২ টাকাতেও কিনতে হচ্ছে। যে মিনিকেট ৭০ টাকায় পাওয়া গেছে, সেটা এ বছর ৭৫ থেকে ৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ানবাজারের চাটখিল রাইস এজেন্সির পাইকারি ব্যবসায়ী মো. বিলাল হোসেন বলেন, মিলগুলোই বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) দাম ১০০-২০০ টাকা বাড়িয়ে পরে ৫০ টাকা কমায়। এমন সময় স্বর্ণা অন্তত ৪৫ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। অথচ নতুন স্বর্ণা চালের দাম ৫২ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। এখন স্বর্ণার দাম ৫০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে।

বিলাল হোসেন আরও বলেন, সাধারণত নতুন মৌসুমের চাল উঠলেই বাজারে অন্তত এক থেকে দেড় মাস চালের দাম কম থাকে। কিন্তু বাজার পরিস্থিতি এখন পাল্টে গেছে। আগে ছিল কেবল মিল মালিক, কিন্তু এখন গোটা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। বাজার মৌসুম অনুযায়ী চলছে না। স্বাভাবিক নিয়মে বাজার চললে নতুন চালের দাম আরও কমার কথা।

এ বাজারের মেসার্স রনি রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী মো. মনিরুল ইসলাম জনি বলেন, কারওয়ানবাজারের বেশির ভাগ চাল মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট থেকে আসে। সেখানে অনেক আগেই আমন চাল ঢুকেছে। আমদানিকৃত চালের সরবরাহও আছে। কয়েকটি চালের দাম কেজিপ্রতি ১-২ টাকা কমলেও বেশির ভাগ চালের দাম আগের মতো চড়া। তিনি বলেন, ‘মিল মালিকরা দাম কমাচ্ছেন না। তারা নানা কারণ দেখিয়ে দাম বাড়তি ধরে রেখেছেন। তাই আমাদের কমে বিক্রি করার সুযোগ নেই।’

জানতে চাইলে চাল কল মালিকদের বড় সংগঠন বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী আমাদের সময়কে বলেন, ‘চালের দাম বৃদ্ধির প্রধান কারন হচ্ছে- ধানের দাম বেশি। ফলে চালের দামও বেশি। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক ও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের খরচ অনেক বেড়েছে।’ দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা বলতে পারব না। ধানের দাম না কমলে, খরচ না কমলে চালের দাম কীভাবে কমবে।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আমাদের সময়কে বলেন, পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক কিংবা স্বাভাবিকের কাছাকাছি থাকলে দাম বাড়তে পারে না। উৎপাদন বাড়লেও সরবরাহে কারসাজি হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী নৈতিক ব্যবসা করছেন না। মিল মালিকদের কেউ কেউ মজুদ করছেন- এমন অভিযোগ উঠে আসছে বারবার। সরবরাহে আমাদের নজরদারি বাড়াতে হবে আগে।’

গোলাম রহমান বলেন, কেবল খুচরা ও পাইকারি বাজার তদারকিতে জরিমানা করলে হবে না। মিলগুলোতেও নজরদারি থাকতে হবে। কেউ অবৈধভাবে মজুদ করছে কিনা দেখতে হবে। চাল ক্রয়-বিক্রয়ে পাকা রসিদ ব্যবহার হচ্ছে কিনা দেখতে হবে। পাশাপাশি বড় প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে এক চেটিয়া বাণিজ্য করতে না পারে, সেজন্য বাজারে সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।

 

Comment here