জনগণের ওপর করের বোঝা চাপানো হয়েছে : বিএনপি - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
রাজনীতি

জনগণের ওপর করের বোঝা চাপানো হয়েছে : বিএনপি

আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের ওপর করের বোঝা চাপানো হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। আজ শুক্রবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

প্রস্তাবিত এই বাজেটকে ঋণনির্ভর, করের বোঝা সম্পন্ন, উচ্চাভিলাসী ও গণবিরোধী অবাস্তব বলেও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে ৮.২০ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা অর্থনৈতিক সার্ভে রিপোর্টের সঙ্গে মিল নেই। জনগণের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে এই বাজেট, যা নিয়ে জনমনে কোনো উচ্ছাস নেই।’

বাজেট নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ফখরুল আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ চাপে পড়বে, ধনী-দরিদ্র্যের বৈষম্য বাড়বে। প্রস্তাবিত বাজেট জন-প্রত্যাশা পূরণ করবে না। এই বাজেট সাধারণ মানুষের ওপর সরাসরি চাপ পড়বে, তাদের প্রকৃত আয় কমে গেছে, বৈষম্য বাড়ছে। ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হচ্ছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ভুগছে মধ্য ও নিম্নবিত্তরা। তাদের ওপর করের চাপ আরও বেড়ে যাবে। এক কথায় আমরা বলতে পারি, এতে সামগ্রিকভাবে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে, মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। কারণ জনগণের বিরুদ্ধে এই বাজেট দেওয়া হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বাজেটে সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলো কিছুই আসেনি। তাদের যে প্রধান সমস্যাগুলো অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-তার কোনোটাই সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এক কথায় এই বাজেট জন-প্রত্যাশা পূরণ করবে না, তারা (জনগণ) নিবার্চনের মতো এই বাজেটও গ্রহণ করবে না।’

বাজেটের চিত্র সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনি বাজেটের চিত্র দেখেন, তুলনামূলকভাবে বরাদ্দ কমে যাচ্ছে। কল্যাণ রাষ্ট্রের নীতি বিসর্জন দিয়ে সরকার বাজেট প্রণয়নে নীতিগর্হিতভাবে অরাজগতার আশ্রয় নিয়েছে। তারা দেশকে ঋণনির্ভর বৃত্তে আবদ্ধ করে রেখেছে।’

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দকৃত ব্যয়ের গুণগত মান, মেগা প্রকল্পের ব্যয় ‘অস্বাভাবিক’ বৃদ্ধি, জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা, বেকারত্ব, কর্মসংস্থান, সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিষয়ে নিয়ে বাজেটে যেসব বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ফখরুল।

ঘাটতি বাজেটের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ঋণের পরিমান বৃদ্ধির ফলে সুদ-আসল পরিশোধ করতেই বাজেটে বিশাল ব্যয় হচ্ছে। ঋণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সরকারি চাকরিতে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি, গণহারে পদোন্নতির মাধ্যমে বেতনকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি। এই অর্থবছরে বেতন-ভাতার জন্য রাজস্ব আয়ের ২০ দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা কোনো অবস্থাতে যুক্তিযুক্ত বলা যাবে না।’

ঋণ বিষয়ে সময়সীমা পরিবর্তনের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘সম্প্রতি ঋণ হিসাবের সময়সীমায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাঁচ বছরের স্থলে তিন বছরের মাথায় ব্যালেন্স শিট থেকে ঋণ অবলোপন করা হবে। এ এক অদ্ভুত ব্যাপার। এর মানে হলো, অ্যাকাউন্টিং ট্রিপমেন্ট দিয়ে দ্রুত ঋণ সাফ করে দেওয়া যাবে। ব্যালেন্স শীট আরও আকর্ষণীয় হবে। এটা জনগণকে গোঁজামিল দেওয়া, যা মোটেও কাম্য নয়। আসলে বিরাটাকার খেলাপি ঋণ জনগণের দৃষ্টির আড়াল করার জন্য এমন ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।’

সাধারণ মানুষের মোবাইল ও সিমের ওপর কর বৃদ্ধির সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘বাজেটে একদিকে সোনার দাম কমানো হয়েছে, যা কি না সমাজের সুবিধাভোগী একটা শ্রেণি ব্যবহার করে। অথচ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ। সেই মোবাইল, সিম ও সার্ভিসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে বাজেটে। বাজেটে সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সিগারেটের ওপর শুল্ক না বাড়ায় সিগারেট কোম্পানির ৩১% আয় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ সারা বিশ্বে সিগারেট নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এটা এক শুভঙ্করের ফাঁকি।’

মির্জা ফখরুল তার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বাজেটে মৌলিক সমস্যা সমাধানের দিকে দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে না। জিডিপিতে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২৩ শতাংশে ঘোরপাক খাচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রার্থীর জন্য চাকরির বাজার অপর্যাপ্ত। আবার চাকরির বাজারের সঙ্গে শিক্ষার মান সমানতালে বেড়ে উঠছে না। বিদেশ থেকে দক্ষতার ঘাটতি পূরণে জনবল আমদানি করতে হচ্ছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারত প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে। বর্তমানে ৪ কোটি ৮২ লাখের মতো তরুণ বেকার। ৪৭ শতাংশ স্নাতক বেকার।

অসমতা বাড়ছে হু হু করে

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল বৃহস্পতিবার ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন। টাকার অঙ্কে এটা বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি।

বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল শুরুতেই বলেন, ‘অনির্বাচিত’ এই সরকারের বাজেট দেওয়ার নৈতিক অধিকার নেই। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র অনির্বাচিত সরকারে রয়েছে বাংলাদেশ। এরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, তারা জনগণের দায়বদ্ধ নয়। দেশের অর্থনীতি কিছু মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। আমরা মনে করি, জনমত সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মধ্য দিয়ে জনগণের একটা সংসদের, যাতে বাজেট আসে সেজন্য আমরা কাজ করছি, সেই কাজকে আমরা আরও বেগবান করব।

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

Comment here